ওয়াকফ বিল ২০২৫: সরকারি সম্পত্তি ওয়াকফের দখল থেকে মুক্ত, নতুন সংশোধনী প্রকাশ

ওয়াকফ বিল ২০২৫: সরকারি সম্পত্তি ওয়াকফের দখল থেকে মুক্ত, নতুন সংশোধনী প্রকাশ

বুধবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০ূ৫ পেশ করেছেন, যা ভারতের ওয়াকফ সম্পত্তির প্রশাসনে একটি বড় পরিবর্তন আনতে চায়। বিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিধান হলো, সরকারি সম্পত্তিকে ভুলভাবে ওয়াকফ জমি হিসেবে ঘোষিত বা দাবি করা নিষিদ্ধ হবে। এই সংশোধনী, যাকে এখন “উমিদ বিল” (ইউনিফাইড ওয়াকফ ম্যানেজমেন্ট, এমপাওয়ারমেন্ট, এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) নামে জানা হবে, ওয়াকফ ব্যবস্থার স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং জবাবদিহিতা বাড়ানোর লক্ষ্য রাখে।

বিলের মূল বিধান: সরকারি জমির রক্ষা

বিলের ধারা ৩গ অনুসারে, যদি কোনো সম্পত্তি সরকারি জমি না হয় বা ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে দাবি করা হয়, তবে বিষয়টি জেলা কালেক্টরের কাছে পাঠানো হবে। কালেক্টর তদন্ত চালাবেন এবং রাজ্য সরকারকে একটি প্রতিবেদন জমা দেবেন। প্রতিবেদন জমা না হওয়া পর্যন্ত, প্রশ্নবিদ্ধ সম্পত্তি ওয়াকফ জমি হিসেবে গণ্য হবে না। যদি কালেক্টর নির্ধারণ করেন যে সম্পত্তিটি সরকারের, তবে রাজস্ব রেকর্ডে সংশোধন করা হবে, এবং রাজ্য সরকার ওয়াকফ বোর্ডকে তাদের রেকর্ড আপডেট করতে নির্দেশ দেবে।

কিরেন রিজিজু বিল উপস্থাপন করতে গিয়ে বলেন, “এই সংশোধনী ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করবে। সরকার কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়, বরং অতীতের অসঙ্গতি দূর করে জনসাধারণের সম্পদ রক্ষা করতে কাজ করছে।” তিনি জোর দিয়েছেন যে বিলটি সরকারি হাসপাতাল, স্কুল বা অফিসের মতো সম্পত্তিকে ভুলভাবে ওয়াকফ হিসেবে দাবি করার প্রবণতা রোধ করবে, যা বছরের পর বছর আইনি বিরোধ সৃষ্টি করেছে।

উমিদ বিলের লক্ষ্য: সংস্কার ও ক্ষমতায়ন

বিলের নাম “উমিদ” হিসেবে পরিবর্তন করা হয়েছে, যা ওয়াকফ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও স্থানীয় বোর্ডগুলোর দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্য রাখে। এটি ওয়াকফ সম্পত্তির আরও ভাল ব্যবহার নিশ্চিত করে সম্প্রদায়ের উন্নয়নে অবদান রাখবে। রিজিজু বলেন, “এই বিল ওয়াকফের স্বচ্ছতা ও কার্যক্ষমতা বাড়াবে, যা লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য উপকারী হবে।”

বিতর্ক ও বিরোধিতা: সংসদে তীব্র প্রতিক্রিয়া

বিলটি সংসদে তীব্র বিতর্কের কারণ হয়েছে। বিরোধী দলের নেতারা, যেমন কংগ্রেসের কেসি বেণুগোপাল, অভিযোগ করেছেন যে সরকার সঠিক আলোচনা ছাড়াই বিলটি জোর করে পাস করতে চায়। বেণুগোপাল বলেন, “সাংসদদের এই বিল নিয়ে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি।” আরএসপি সাংসদ এনকে প্রেমাচন্দ্রনও পদ্ধতিগত ত্রুটি চিহ্নিত করেছেন।

অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিলের পক্ষে সাফাই দিয়েছেন। তিনি বলেন, “সমস্ত পরিবর্তন যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) সুপারিশের ভিত্তিতে, যা বিধানগুলো বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করেছে। এটি ওয়াকফ প্রশাসনের জন্য একটি ঐতিহাসিক সংস্কার।”

সমাজের প্রতিক্রিয়া: স্বাগত বা উদ্বেগ?

কিছু মুসলিম নেতা এই বিলকে স্বাগত জানিয়েছেন, বলে এটি ওয়াকফ সম্পত্তির দুর্নীতি ও অপচয় রোধ করবে। তবে, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (AIMPLB) বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে, দাবি করে যে এটি সম্প্রদায়ের অধিকার হরণ করবে। একজন সমাজকর্মী বলেন, “বিলের উদ্দেশ্য ভালো, কিন্তু এর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা গুরুত্বপূর্ণ।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *