ওয়াকফ বিল লোকসভায় পাশ: ২৮৮-২৩২ ভোটে জয়, রাজ্যসভায় চ্যালেঞ্জ

ওয়াকফ বিল লোকসভায় পাশ: ২৮৮-২৩২ ভোটে জয়, রাজ্যসভায় চ্যালেঞ্জ

দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার উত্তপ্ত বিতর্কের পর গতকাল লোকসভায় ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৫ পাশ হয়েছে। ৫৪০ সাংসদের মধ্যে ২৮৮ জন বিলের পক্ষে এবং ২৩২ জন বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। এখন এই বিল রাজ্যসভার কঠিন পরীক্ষার মুখে, যেখানে এনডিএ-র সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও বিরোধীদের তীব্র প্রতিরোধের সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বুধবার বিলটি পেশ করেন, যা ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। তবে, বিরোধীরা এটিকে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর হামলা’ বলে কঠোর সমালোচনা করেছে।

বিতর্কের কেন্দ্রে: সরকারের যুক্তি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিলের পক্ষে বলেন, “ওয়াকফ মানে আল্লাহর নামে সম্পত্তি দান। কিন্তু কেউ সরকারি বা অন্যের জমি দান করতে পারে না। এই বিল সেই অসঙ্গতি দূর করবে।” তিনি স্পষ্ট করেন, “ওয়াকফে কোনো অমুসলিম সদস্য বা মুতাওয়াল্লি থাকবে না। আমরা ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছি না, শুধু ব্যবস্থাপনা সংস্কার করছি।” জেডিইউ নেতা রাজীব রঞ্জন সিং ওরফে লল্লান সিং যোগ করেন, “২০১৩-এ কংগ্রেসের ভুল সংশোধন করেছে মোদী সরকার। এটি স্বচ্ছতার জন্য।”

বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর আরও জোর দিয়ে বলেন, “ওয়াকফ দুর্নীতির আড্ডা হয়ে উঠেছিল। আগে ওয়াকফ যা বলত, তাই সঠিক ধরা হতো। এখন জমির মালিকানা প্রমাণ করতে হবে। এটি ন্যায়বিচারের পথ খুলবে।”

বিরোধীদের আক্রমণ: ‘ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর আঘাত’

বিরোধী দলগুলো বিলটিকে তীব্রভাবে প্রতিহত করেছে। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব আলোচনার সময় ওয়াকফ থেকে বিষয়ান্তরে গিয়ে বলেন, “সরকার চীনের দখলকৃত জমি, রেলের জমি বিক্রি, বেকারত্ব—এসব থেকে দৃষ্টি সরাতে এই বিল এনেছে। মহাকুম্ভে হিন্দুদের মৃত্যু নিয়ে কী হলো?” তিনি বিলটিকে বিজেপির ‘ব্যর্থতা ঢাকার কৌশল’ বলে কটাক্ষ করেন।

কংগ্রেস ও এআইএমআইএম-এর নেতারাও সমালোচনায় মুখর। ওয়াইসি বলেন, “এটি সংবিধানের সমতার নীতি ভঙ্গ করে। ওয়াকফে অমুসলিম সদস্য কেন?” তিনি বিলের কপি ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানান।

বিলের মূল বিষয়: কী বদলাচ্ছে?

  • স্বচ্ছতা: সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তির বিবরণ অনলাইনে প্রকাশিত হবে।
  • মালিকানা: দানকারীকে প্রমাণ করতে হবে জমি তার নিজের এবং বিরোধমুক্ত।
  • নারী অধিকার: ‘ওয়াকফ-আল-আওলাদ’-এ নারীরাও উত্তরাধিকারী হবেন।
  • নথি বাধ্যতামূলক: কাগজপত্র ছাড়া কোনো জমি ওয়াকফ হবে না।
  • বোর্ড গঠন: মুসলিম নারী ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব বাধ্যতামূলক।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

শাহ উল্লেখ করেন, ওয়াকফের ধারণা ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমরের সময় থেকে চলে আসছে। ভারতে সুলতানি আমলে এটি শুরু হয়। ব্রিটিশ আমলে ১৯১৩-এ মুসলিম ওয়াকফ বৈধতা আইন আসে। স্বাধীনতার পর ১৯৫৪ ও ১৯৯৫-এ আইন সংশোধিত হয়। এবারের সংস্কারকে সরকার ‘ঐতিহাসিক’ বলছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *