কিউশুতে ৬.০ মাত্রার ভূমিকম্প: জাপান কাঁপল, আতঙ্ক

মঙ্গলবার রাতে জাপানের কিউশু দ্বীপে ৬.০ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৭:৩৪-এ (জাজল সময় রাত ৯:৩৪) এই কম্পন অনুভূত হয়। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি (এনসিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল দক্ষিণ কিউশুতে, যেখানে কয়েক সেকেন্ড ধরে তীব্র কম্পন মানুষকে ঘরবাড়ি ছেড়ে খোলা জায়গায় ছুটতে বাধ্য করেছে। তবে, সুনামির আশঙ্কা না থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন সতর্কতা জারি করেছে।
কী ঘটল কিউশুতে?
জাপানের আবহাওয়া বিভাগ জানায়, ভূমিকম্পটি ৩৫ কিলোমিটার গভীরতায় আঘাত হানে। কিউশুর ফুকুওকা ও কাগোশিমার মতো শহরে কম্পন সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়। একজন স্থানীয় বাসিন্দা, হিরোকি তানাকা, বলেন, “আমি রাতের খাবার তৈরি করছিলাম, হঠাৎ মনে হলো মাটি নড়ছে। আমরা দ্রুত বাইরে চলে আসি।” কয়েক সেকেন্ডের এই কম্পনের পরও অনেকে ভয়ে বাড়ি ফিরতে সাহস পাননি। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, এখনও বড় ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে ভবন ও রাস্তার ক্ষতি পরীক্ষা চলছে।
সুনামি নেই, তবু সতর্কতা
জাপানের আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ) নিশ্চিত করেছে, “এই ভূমিকম্প থেকে সুনামির কোনো সম্ভাবনা নেই।” তবে, তারা পরবর্তী কম্পনের (আফটারশক) আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি। জরুরি পরিষেবা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দলকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। জেএমএ-র এক কর্মকর্তা বলেন, “৬.০ মাত্রা গুরুতর, তবে জাপানের কঠোর নির্মাণ মানের কারণে বড় ধ্বংসের সম্ভাবনা কম।” স্থানীয়দের গুজবে কান না দিয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
কেন জাপানে ঘন ঘন ভূমিকম্প?
জাপান ‘প্যাসিফিক রিং অফ ফায়ার’-এ অবস্থিত, যেখানে পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটগুলোর সংঘর্ষ ঘটে। ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ ড. কেনজি সাতো ব্যাখ্যা করেন, “কিউশুতে ইউরেশিয়ান ও ফিলিপাইন সি প্লেটের মিলনস্থল রয়েছে। এই অঞ্চলে প্রতি বছর শতাধিক ভূমিকম্প হয়।” জাপানে গড়ে ১,৫০০টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয় বছরে, যার বেশিরভাগই ছোট মাত্রার। তবে, ৬.০ বা তার বেশি মাত্রার কম্পন গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়।
অতীতের ছায়া: ২০১১ ও ২০১৬
জাপানের ভূমিকম্পের ইতিহাস ভয়াবহ। ২০১১-এ ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্প ও সুনামিতে ১৫,০০০-এর বেশি মানুষ প্রাণ হারান এবং ফুকুশিমায় পারমাণবিক বিপর্যয় ঘটে। ২০১৬-এ কুমামোতোতে ৭.০ মাত্রার ভূমিকম্পে ৫০ জনের মৃত্যু হয়। এই স্মৃতি জাজলদের মনে গেঁথে আছে, যা মঙ্গলবারের ঘটনায় আতঙ্ক বাড়িয়েছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর।