ওয়াকফ বিল লোকসভায় পাশ: মধ্যরাতের বিতর্ক, রাজ্যসভায় চোখ

বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত চলা তীব্র বিতর্কের পর লোকসভায় ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৫ পাশ হয়েছে। ২৮৮-২৩২ ভোটে বিলটি অনুমোদিত হয়, যা ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আনতে চলেছে। আজ বৃহস্পতিবার এটি রাজ্যসভায় পেশ হবে, যেখানে এনডিএ-র সংখ্যাগরিষ্ঠতা পরীক্ষার মুখে পড়তে পারে। বিরোধীরা বিলটিকে ‘মুসলিম-বিরোধী’ ও ‘অসাংবিধানিক’ বলে আক্রমণ করলেও, সরকার জোর দিয়ে বলছে, এটি ধর্মীয় হস্তক্ষেপ নয়, বরং স্বচ্ছতার পদক্ষেপ।
মধ্যরাতের নাটক: বিতর্কের ঝড়
১২ ঘণ্টার ম্যারাথন আলোচনায় লোকসভা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এআইএমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বিলের কপি ছিঁড়ে ফেলে বলেন, “এটি মুসলিমদের ওপর আক্রমণ।” কংগ্রেসের গৌরব গগৈ অভিযোগ করেন, “এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ভাঙছে।” বিরোধীরা ৪৪টি সংশোধনী পেশ করলেও তা প্রত্যাখ্যাত হয়। অন্যদিকে, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর সংশোধনী গৃহীত হয়। এনডিএ মিত্র জেডিইউ, টিডিপি ও এলজেপি একযোগে বিল সমর্থন করে।
রিজিজু বলেন, “এটি মসজিদ বা দরগা কেড়ে নেওয়ার বিল নয়। আমরা ওয়াকফ সম্পত্তির সঠিক ব্যবস্থাপনা চাই। বিরোধীরা অসাংবিধানিক বলছে, কিন্তু আদালত কেন এটি বাতিল করেনি?” তিনি বিলটির নামকরণ করেন ‘উমিদ’ (ইউনিফাইড ওয়াকফ ম্যানেজমেন্ট এমপাওয়ারমেন্ট, এফিশিয়েন্সি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট), যা স্বচ্ছতার প্রতীক বলে দাবি করেন।
সরকারের যুক্তি: সংস্কার না হস্তক্ষেপ
রিজিজু জানান, ২০০৬-এ সাচার কমিটির রিপোর্টে ৪.৯ লাখ ওয়াকফ সম্পত্তির আয় ছিল ১৬৩ কোটি টাকা। বর্তমানে ৮.৭২ লাখ সম্পত্তি থাকলেও আয় মাত্র ১৬৬ কোটি। তিনি বলেন, “সঠিক ব্যবস্থাপনা হলে দরিদ্র মুসলিমরা উপকৃত হবে। এতদিন ওয়াকফ বোর্ড যেকোনো জমি দখল করতে পারত। এখন নথি ছাড়া তা সম্ভব নয়।” তিনি অতীতের উদাহরণ টেনে বলেন, “২০১৪-এ কংগ্রেস ১২৩টি সম্পত্তি ওয়াকফকে দিয়েছিল। মোদী না এলে সংসদ ভবনও দাবি করা হতো।”
বিরোধীদের আক্রমণ: ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রশ্ন
ওয়াইসি প্রশ্ন তোলেন, “মুসলিম শিশুদের জন্য ওয়াকফ আছে, হিন্দুদের জন্য কেন নেই?” রিজিজু জবাবে বলেন, “হিন্দুদের জন্য ইতিমধ্যে ব্যবস্থা আছে।” গগৈ অভিযোগ করেন, “এনজিও-দের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। বিরোধীদের একটি সংশোধনীও গৃহীত হয়নি।” তিনি বিলটিকে সংখ্যালঘুদের অধিকারে হস্তক্ষেপ বলে আখ্যা দেন। তবে, কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির কিছু নেতা বিলের মূল উদ্দেশ্যের বিরোধিতা না করে নির্দিষ্ট ধারায় আপত্তি জানান।
বিলের মূল বিষয়
- স্বচ্ছতা: সম্পত্তির বিবরণ অনলাইনে প্রকাশিত হবে।
- নথি বাধ্যতামূলক: কাগজপত্র ছাড়া ওয়াকফ দাবি অগ্রাহ্য।
- নারী অধিকার: ‘ওয়াকফ-আল-আওলাদ’-এ নারীদের উত্তরাধিকার নিশ্চিত।
- বোর্ড গঠন: মুসলিম নারী ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব।
- কার্যকারিতা: বিজ্ঞপ্তি জারির দিন থেকে আইন কার্যকর।