গভীর রাতে লোকসভায় ওয়াকফ বিল পাস: ২৮৮-২৩২ ভোটে জয়

গভীর রাতে লোকসভায় ওয়াকফ বিল পাস: ২৮৮-২৩২ ভোটে জয়

দীর্ঘ ১১ ঘণ্টার উত্তপ্ত বিতর্কের পর গভীর রাতে লোকসভায় ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৫ পাস হয়েছে। ২৮৮-২৩২ ভোটে বিলটি অনুমোদিত হয়েছে বলে স্পিকার ওম বিড়লা জানিয়েছেন। বুধবার সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বিলটি পেশ করেন, এবং আজ এটি রাজ্যসভায় উত্থাপিত হবে। বিরোধীদের তীব্র প্রতিবাদ ও ‘অসাংবিধানিক’ অভিযোগ সত্ত্বেও সরকার এটিকে স্বচ্ছতার পদক্ষেপ বলে দাবি করেছে।

মধ্যরাতের বিতর্ক: উত্তেজনার শীর্ষে

বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া আলোচনা গভীর রাত পর্যন্ত চলে। বিরোধী নেতারা বিলটিকে ‘মুসলিম-বিরোধী’ ও ‘সংবিধান-বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানান। এআইএমআইএম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বিলের কপি ছিঁড়ে ফেলে বলেন, “এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত।” জবাবে, যৌথ সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পাল বলেন, “ওয়াইসি বিলকে অসাংবিধানিক বলছেন, কিন্তু কপি ছেঁড়া তার নিজের কাজই অসাংবিধানিক।” কিরেন রিজিজু চূড়ান্ত বক্তৃতায় বলেন, “যারা এটিকে অসাংবিধানিক বলছেন, তারা বলুন—আদালত কেন এটি বাতিল করেনি? এই শব্দ হালকাভাবে ব্যবহার করা উচিত নয়।”

সরকারের যুক্তি: স্বচ্ছতা না হস্তক্ষেপ?

‘ইউনিফাইড ওয়াকফ ম্যানেজমেন্ট এমপাওয়ারমেন্ট, এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ (UMEED) নামে অভিহিত এই বিলটি ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় সংস্কার আনার লক্ষ্য নিয়েছে। রিজিজু জানান, “এটি মসজিদ বা ধর্মীয় স্থান কেড়ে নেওয়ার বিল নয়। আমরা দুর্নীতি রোধ ও স্বচ্ছতা চাই।” তিনি উল্লেখ করেন, ওয়াকফের আয় বাড়লে দরিদ্র মুসলিমরা উপকৃত হবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সমর্থনে বলেন, “এই আইনে মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপ নেই। বিরোধীরা রাজনৈতিক স্বার্থে এটিকে বিতর্কিত করছে।”

বিরোধীদের আক্রমণ

বিরোধী দলগুলো বিলটিকে সংখ্যালঘুদের স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপ বলে অভিযোগ করেছে। কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ বলেন, “এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামো লঙ্ঘন করে।” ওয়াইসি প্রশ্ন তোলেন, “মুসলিমদের জন্য ওয়াকফ আছে, হিন্দুদের জন্য কেন নেই?” রিজিজু জবাবে বলেন, “হিন্দুদের জন্য ইতিমধ্যে ব্যবস্থা আছে। এটি ধর্মীয় হস্তক্ষেপ নয়।” বিরোধীরা ৪৪টি সংশোধনী প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখ্যাত হয়।

বিলের মূল বিষয়

  • স্বচ্ছতা: ওয়াকফ সম্পত্তির বিবরণ অনলাইনে প্রকাশ।
  • নথি বাধ্যতামূলক: কাগজপত্র ছাড়া দাবি অগ্রাহ্য।
  • নারী অধিকার: উত্তরাধিকারে নারীদের অংশ নিশ্চিত।
  • বোর্ডে প্রতিনিধিত্ব: মুসলিম নারী ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ।

রাজনৈতিক সমর্থন

বিলটি এনডিএ-র মিত্র টিডিপি, জেডিইউ ও এলজেপি-র সমর্থন পেয়েছে। অমিত শাহ বলেন, “এটি ভারত সরকারের আইন, সবাইকে মেনে নিতে হবে। ওয়াকফের চুরি হওয়া টাকা ধরে উন্নয়নে ব্যবহার হবে। কেউ এতে অমুসলিমদের হস্তক্ষেপের ভয় দেখাচ্ছে, তা ভিত্তিহীন।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *