সিআরপিএফ-এ নতুন দিন: জওয়ানদের ‘মন কি বাত’ এখন ডিজির কাছে সরাসরি!

সিআরপিএফ-এ নতুন দিন: জওয়ানদের ‘মন কি বাত’ এখন ডিজির কাছে সরাসরি!

দেশের বৃহত্তম কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী সিআরপিএফ-এর ৩.২৫ লক্ষ সদস্যের জন্য সুখবর। মহাপরিচালক (ডিজি) জিপি সিং এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে জওয়ান ও অফিসারদের সরাসরি তাঁর সঙ্গে ‘মন কি বাত’ ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এই উদ্যোগে পুরনো আমলাতান্ত্রিক বাধা ভেঙে সকল স্তরের কর্মীদের কথা শোনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

নতুন নিয়ম, নতুন আশা

এতদিন সিআরপিএফ-এর নিম্নপদস্থ জওয়ান, কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর, এমনকি কমান্ড্যান্টরাও ডিজির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। ‘বাছাই করো এবং বেছে নাও’ নীতির কারণে শুধু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পছন্দের কয়েকজনই ডিজির দরজায় পৌঁছতে পারতেন। এমনকি সাক্ষাতের অনুমতি পেলেও কী বলা যাবে, কী যাবে না—তার ওপর কড়া শর্ত ছিল। এখন ডিজি জিপি সিং এই প্রথা ভেঙে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া চালু করেছেন।

নতুন নিয়মে যে কোনো সদস্য dg@crpf.gov.in ইমেলে সাক্ষাতের আবেদন করতে পারবেন। কোনো আবেদন বাতিল করা যাবে না—প্রতিটি ইমেল সিরিয়াল নম্বর পাবে। এরপর সিদ্ধান্ত হবে, বৈঠক সশরীরে না ভিডিও কনফারেন্সে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, সাক্ষাতের এক সপ্তাহের মধ্যে উত্থাপিত বিষয়ে লিখিত আদেশ জারি হবে, যা দ্রুত সমাধানের নিশ্চয়তা দেয়।

কীভাবে কার্যকর হবে?

  • নিম্নপদস্থদের জন্য: কনস্টেবল বা ইন্সপেক্টররা সরাসরি ইমেলে সমস্যা জানাতে পারবেন। বৈঠক ভিডিও কনফারেন্সে হলে ‘আইজি পার্স’ ও ‘এডিজি হেডকোয়ার্টার্স’ উপস্থিত থাকবেন।
  • ঊর্ধ্বতনদের জন্য: কমান্ড্যান্টরা ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ চাইলে ডিজির চেম্বারে আলোচনা হবে, তবে একই কর্মকর্তারা সেখানেও থাকবেন।
  • স্বচ্ছতা: আবেদনকারীর পোস্টিং বিবরণ ও মামলার রেকর্ড (যদি থাকে) ডিজির সামনে থাকবে। কোনো আবেদন বাছাই বা প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা মধ্যস্থ কর্মকর্তাদের হাতে থাকবে না।

ডিজি জিপি সিং বলেন, “আমি চাই প্রতিটি জওয়ানের কথা শুনতে। তাদের সমস্যা আমার কাছে পৌঁছানোর পথে কোনো দেয়াল থাকবে না।”

কেন এই পরিবর্তন?

দীর্ঘদিন ধরে সিআরপিএফ-এর নিম্নপদস্থরা অভিযোগ করেছেন যে তাদের কথা ঊর্ধ্বতনদের কাছে পৌঁছায় না। কঠিন পরিস্থিতিতে মাওবাদী এলাকায় বা সীমান্তে দায়িত্ব পালন করা জওয়ানদের মানসিক চাপ, পারিবারিক সমস্যা বা সুবিধার অভাব নিয়ে কথা বলার সুযোগ ছিল না। এক জওয়ান নাম প্রকাশ না করে বলেন, “আমরা মাটিতে লড়ি, কিন্তু আমাদের কথা টেবিলে পৌঁছায় না। এই উদ্যোগ আমাদের কণ্ঠস্বর ফিরিয়ে দিয়েছে।”

বাহিনীতে প্রভাব

বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ সিআরপিএফ-এর মনোবল বাড়াবে। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা জওয়ানদের জন্য এটি একটি মানসিক স্বস্তি। সামরিক বিশেষজ্ঞ রাহুল ভট্টাচার্য বলেন, “এটি শুধু যোগাযোগের সেতু নয়, বাহিনীর মধ্যে বিশ্বাসও তৈরি করবে। তবে, এর সফলতা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের ওপর।”

চ্যালেঞ্জ কী?

নতুন নিয়মে আবেদনের ভিড় বাড়তে পারে। ৩.২৫ লক্ষ সদস্যের বাহিনীতে প্রতিদিন শত শত ইমেল আসলে তা সামলানো কঠিন হবে। তবে, ডিজির কার্যালয় জানিয়েছে, একটি ডেডিকেটেড টিম এই প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে। এছাড়া, সাত দিনে সমাধানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করাও বড় চ্যালেঞ্জ।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

এই উদ্যোগ অন্য আধাসামরিক বাহিনীর জন্যও নজির হতে পারে। সিআরপিএফ-এর এই পদক্ষেপ সফল হলে সরকারি সংস্থাগুলোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে। জওয়ানদের কথা শোনার এই প্রতিশ্রুতি কেবল বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানই নয়, দেশের নিরাপত্তার মেরুদণ্ডকে আরও শক্তিশালী করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *