মোদী-ইউনূস বৈঠক: বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

মোদী-ইউনূস বৈঠক: বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সাক্ষাতে মোদী বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি সরাসরি তুলে ধরেছেন, যা দুই দেশের সম্পর্কের বর্তমান স্থবিরতার প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।

বৈঠকের মূল আলোচ্য

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি জানিয়েছেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি আশা করেন, বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়ে দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেবে।” মোদী আরও বলেছেন, “ভারত একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল বাংলাদেশের পক্ষে। আমরা ঢাকার সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক চাই।” বৈঠকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টিও উঠে আসে, যিনি গত বছরের ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর থেকে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে, মিস্রি এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান।

ইউনূসের চীন সফরের প্রভাব

এই বৈঠকের পটভূমিতে ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে বিতর্ক উল্লেখযোগ্য। বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতে ইউনূস বলেছিলেন, “বাংলাদেশ এই অঞ্চলের সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো, যাদের ‘সেভেন সিস্টার্স’ বলা হয়, স্থলবেষ্টিত। তাদের সমুদ্রে প্রবেশের একমাত্র পথ বাংলাদেশ।” এই মন্তব্য ভারতের কাছে উসকানিমূলক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতার প্রেক্ষাপটে।

ভারতের অবস্থান

মোদী বৈঠকে পরামর্শ দিয়েছেন, “দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষতি করে এমন বক্তব্য এড়ানো উচিত।” ভারত বারবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে এসেছে। গত বছর শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে দেশটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ বেড়েছে, যা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে। মিস্রি জানান, “এই বৈঠকে সীমান্ত নিরাপত্তা, অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং জল বণ্টনের মতো বিষয়ও আলোচিত হয়েছে।”

বিশ্লেষণ: সম্পর্কের গতিপথ

শেখ হাসিনার আমলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক স্থিতিশীল ও সহযোগিতামূলক ছিল। কিন্তু ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের চীনমুখী নীতি এবং ভারত-বিরোধী বক্তব্য সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউনূসের চীন সফর এবং তাঁর মন্তব্য ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। “চিকেন নেক করিডরের কাছাকাছি বাংলাদেশের ভূমিকা ভারতের কাছে সংবেদনশীল। ইউনূসের বক্তব্য এই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে,” বলছেন একজন কূটনৈতিক বিশ্লেষক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *