সোনার দামে বড় ধস: ৪০ শতাংশ পতনের পূর্বাভাস

সোনার দামে অভূতপূর্ব উত্থানের পর এবার বাজারে বড় ধসের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে আকাশচুম্বী দামে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাওয়া এই মূল্যবান ধাতুর দাম আগামী দিনে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যেখানে দেশের ফিউচার মার্কেটে সোনার দাম ৯১,৪০০ টাকা এবং দিল্লির বাজারে ৯৪,০০০ টাকা ছাড়িয়ে রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে, সেখানে এই পতনের সম্ভাবনা ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
দাম কমার পূর্বাভাস: কী বলছেন বিশ্লেষকরা?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা মর্নিংস্টারের কৌশলবিদ জন মিলস একটি চাঞ্চল্যকর ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছেন, “সোনার দাম বর্তমানে প্রতি আউন্স ৩,০৮০ ডলারে রয়েছে, কিন্তু আগামী কয়েক বছরে এটি ১,৮২০ ডলারে নেমে আসতে পারে।” ভারতীয় বাজারে এর প্রভাব পড়লে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম প্রতি ১০ গ্রামে ৯০,০০০ টাকা থেকে কমে প্রায় ৫৫,০০০ টাকায় ঠেকতে পারে। এই পূর্বাভাসের পেছনে তিনি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, সরবরাহ বৃদ্ধি এবং চাহিদা হ্রাসের মতো কারণগুলোকে দায়ী করেছেন।
বিশ্ববাজারে সোনার দাম ২০২৫ সালের শুরু থেকে ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। তবে মিলসের মতে, “বাজার এখন সম্পৃক্ততার শীর্ষে পৌঁছে গেছে। সরবরাহ বাড়ছে, আর চাহিদা কমার লক্ষণ স্পষ্ট।”
পতনের কারণ কী?
বিশ্লেষকদের মতে, সোনার দামে সম্ভাব্য এই পতনের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করছে:
- সরবরাহ বৃদ্ধি: ২০২৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সোনার উৎপাদন বেড়ে খনির মুনাফা প্রতি আউন্সে ৯৫০ ডলারে পৌঁছেছে। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ উৎপাদন বাড়িয়েছে, পাশাপাশি পুনর্ব্যবহৃত সোনার সরবরাহও বৃদ্ধি পেয়েছে।
- চাহিদা হ্রাস: ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৭১ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের সোনার মজুদ কমানোর বা স্থিতিশীল রাখার পরিকল্পনা করছে। গত বছর যেখানে তারা ১,০৪৫ টন সোনা কিনেছিল, সেখানে এই প্রবণতা কমতে পারে।
- বাজারের গতিশীলতা: স্বর্ণ খাতে একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ ৩২ শতাংশ বেড়েছে, যা বাজারের শীর্ষে পৌঁছানোর ইঙ্গিত দেয়।
বৈপরীত্যের ছায়া: বড় ব্যাংকগুলোর আশাবাদ
মর্নিংস্টারের পূর্বাভাসের বিপরীতে ব্যাংক অফ আমেরিকা (BoFA) এবং গোল্ডম্যান শ্যাক্সের মতো প্রতিষ্ঠান সোনার দামে আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখছে। BoFA-এর বিশ্লেষকরা বলছেন, “আগামী দুই বছরে সোনার দাম প্রতি আউন্স ৩,৫০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে।” গোল্ডম্যান শ্যাক্সও বছরের শেষে দাম ৩,৩০০ ডলারে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেছে। তাদের যুক্তি, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মুদ্রাস্ফীতির চাপ সোনাকে বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় রাখবে।
ভারতীয় বাজারে প্রভাব
ভারতে সোনা শুধু বিনিয়োগ নয়, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। গত কয়েক দিনে দাম বৃদ্ধির কারণে গহনার দোকানে ভিড় কমেছে। দিল্লির স্বর্ণ ব্যবসায়ী রমেশ গুপ্তা বলেন, “দাম ৯৪,০০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় ক্রেতারা দ্বিধায় পড়েছেন। যদি দাম ৫৫,০০০ টাকায় নামে, তাহলে বাজারে প্রাণ ফিরবে।”
বৃহস্পতিবার MCX-এ সোনার দাম ৯০,৪৭০ টাকায় লেনদেন হয়েছে, যা সর্বোচ্চ ৯১,৪২৩ টাকা থেকে প্রায় ১,০০০ টাকা কম। এটি ইঙ্গিত দেয় যে বাজারে সংশোধন শুরু হয়েছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
কী হবে ভবিষ্যৎ?
সোনার দামের এই টানাপোড়েনে বিনিয়োগকারী ও ভোক্তারা দুই মেরুতে দাঁড়িয়ে। যেখানে একদিকে পতনের পূর্বাভাস স্বস্তি দিচ্ছে, সেখানে বড় ব্যাংকগুলোর আশাবাদ বাজারে উত্তেজনা ধরে রেখেছে। আগামী মাসগুলোই নির্ধারণ করবে সোনা তার ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রাখবে, নাকি বড় ধসের মুখে পড়বে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—সোনার বাজার এখনও চোখ রাখার মতো গল্প।