তিলকের হতাশ প্রস্থান: মুম্বাইয়ের কৌশল কি ভুল?

লখনউ, ৬ এপ্রিল ২০২৫: আইপিএলের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের (এমআই) ব্যাটসম্যান তিলক ভার্মার অবসর নেওয়ার ঘটনা ক্রিকেট বিশ্বে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শুক্রবার লখনউ সুপার জায়ান্টসের (এলএসজি) বিপক্ষে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে, জয়ের জন্য ৭ বলে ২৪ রান প্রয়োজনের সময় তিলককে ক্রিজ ছাড়তে হয়। এরপরই এমআই ১২ রানে হেরে যায়, আর তিলক হতাশ মুখে মাঠ ছাড়েন। এই সিদ্ধান্তের পেছনে ছিলেন দলের প্রধান কোচ মাহেলা জয়াবর্ধনে, যিনি এটিকে ‘কৌশলগত’ বলে দাবি করেছেন।
ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট
১৮.৫ ওভারে এমআই-এর স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ১৮০। তিলক ২৩ বলে ২৫ রান করে ক্রিজে টিকে ছিলেন, আর অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া ১১ বলে ১৯ রানে অপরাজিত। শেষ ৭ বলে ২৪ রানের সমীকরণ কঠিন হলেও আসাম্ভব ছিল না। তবে তিলককে অবসর নিতে বলা হয়, এবং তার জায়গায় নতুন ব্যাটসম্যান আসে। ফল? এমআই ম্যাচ হারে, আর তিলকের মুখে ফুটে ওঠে হতাশার ছাপ।
ম্যাচের পর তিলকের হাঁটার ভঙ্গি, মাথা নিচু করে প্যাভিলিয়নে ফেরা—সবই ধরা পড়ে ক্যামেরায়। সামাজিক মাধ্যমে ভক্তরা প্রশ্ন তুলেছেন, “তিলক কেন অবসর নিলেন, যেখানে তিনি ম্যাচ শেষ করতে পারতেন?”
কোচের ব্যাখ্যা: কৌশল না ভুল?
ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মাহেলা জয়াবর্ধনে বলেন, “তিলক রান করার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু বলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারছিলেন না। আমরা আশা করেছিলাম, ক্রিজে সময় কাটিয়ে তিনি ছন্দ ফিরে পাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনে হলো, একজন নতুন ব্যাটসম্যানের প্রয়োজন।” তিনি আরও যোগ করেন, “এটা কৌশলগত সিদ্ধান্ত ছিল। একজনকে বাইরে করে আরেকজনকে আনা হয়েছে। এ নিয়ে বেশি ভাবার দরকার নেই।”
জয়াবর্ধনের যুক্তি, তিলকের স্ট্রাইক রেট (১০৮.৬৯) শেষ ওভারের চাপ সামলানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। তবে সমালোচকরা বলছেন, তিলকের মতো অভিজ্ঞ তরুণ ব্যাটসম্যানকে বসিয়ে দেওয়া দলের জয়ের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
ক্রিকেটে ‘রিটায়ার্ড আউট’—একটি বিতর্কিত অধ্যায়
আইপিএল-এ ‘রিটায়ার্ড আউট’ বা কৌশলগত অবসর নেওয়ার ঘটনা নতুন নয়। তবে এটি সবসময়ই বিতর্কের জন্ম দেয়। ২০২২ সালে রবিচন্দ্রন অশ্বিনও একইভাবে অবসর নিয়েছিলেন, যা নিয়ে তখনও আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু তিলকের ক্ষেত্রে সমীকরণ ভিন্ন। ম্যাচের শেষ দিকে ৫ উইকেট হাতে থাকা সত্ত্বেও এমন সিদ্ধান্ত কেন?
ক্রিকেট বিশ্লেষক অমিত শর্মা বলেন, “তিলকের মতো ব্যাটসম্যান, যিনি মাঠে টিকে আছেন, তাকে শেষ ওভারে সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। হার্দিকের সঙ্গে মিলে তিনি বড় শট খেলতে পারতেন। এই সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক মনে হয়।”
হার্দিকের ভূমিকা ও দলের চাপ
অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়ার উপরও প্রশ্ন উঠছে। ১১ বলে ১৯ রান করে তিনি ক্রিজে ছিলেন, কিন্তু তিলকের অবসরের পর শেষ ওভারে দলের রানের গতি ধরে রাখতে পারেননি। ভক্তদের একাংশ মনে করেন, হার্দিকের নেতৃত্বে এমআই-এর কৌশলগত সিদ্ধান্তে ভারসাম্যের অভাব রয়েছে। চলতি মৌসুমে দলের পারফরম্যান্সও তেমন সুবিধাজনক নয়, যা এই সমালোচনাকে আরও জোরালো করেছে।
ভক্তদের ক্ষোভ ও তিলকের ভবিষ্যৎ
সামাজিক মাধ্যমে তিলকের প্রতি সমর্থনের ঢল নেমেছে। একজন ভক্ত লিখেছেন, “তিলককে বসিয়ে দেওয়া মানে ম্যাচ হারার পরিকল্পনা করা। এমআই-এর ম্যানেজমেন্ট কী ভাবছে?” আরেকজন লিখেছেন, “তিলকের হতাশা দেখে মন ভেঙে গেল। ওকে শেষ করতে দেওয়া উচিত ছিল।”
এমআই-এর পরবর্তী ম্যাচ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের (আরসিবি) বিপক্ষে, ৭ এপ্রিল। তিলকের জন্য এটি ফিরে আসার সুযোগ হতে পারে। তবে এই ঘটনা তার মানসিকতায় কী প্রভাব ফেলবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
শেষ কথা
তিলক ভার্মার অবসর নেওয়ার ঘটনা ক্রিকেটে কৌশল আর আবেগের দ্বন্দ্বকে সামনে এনেছে। মাহেলা জয়াবর্ধনে এটিকে ‘ম্যাচ-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত’ বললেও, ভক্ত ও বিশ্লেষকদের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিমত রয়ে গেছে। এই হার শুধু এমআই-এর পয়েন্ট টেবিলেই আঘাত হানেনি, তিলকের মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের মনে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। আগামী দিনে দল এই ভুল থেকে শিক্ষা নেয় কি না, সেটাই দেখার।