ওয়াকফ বিলে ধাক্কা: কেন অবাক ইন্ডিয়া ব্লক?

নয়াদিল্লি, ৬ এপ্রিল ২০২৫: বিতর্কিত ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল রাজ্যসভায় সামান্য ভোটে পরাজিত হয়েছে, যা ভারতীয় রাজনীতিতে এক অপ্রত্যাশিত মোড় নিয়ে এসেছে। লোকসভায় ৫৬ ভোটের বিশাল ব্যবধানে পাস হওয়া এই বিল রাজ্যসভায় এসে ১২৮-এর বিপক্ষে ৯৫ ভোটে হেরে গেছে। এই ফলাফল বিরোধী জোট ইন্ডিয়া ব্লককে হতবাক করেছে, কারণ তাদের ৮১ জন সদস্য থাকা সত্ত্বেও বিরোধী ভোট ৯৫-এ পৌঁছেছে। কীভাবে এমনটা ঘটল? আসুন জেনে নিই এই রাজনৈতিক নাটকের পেছনের গল্প।
অপ্রত্যাশিত জোটের উত্থান
রাজ্যসভায় বিলটির বিরোধিতায় একটি বিরল জোট গড়ে উঠেছে। ইন্ডিয়া ব্লকের ছয়জন সদস্য ভোটদানের সময় অনুপস্থিত থাকলেও, অতিরিক্ত ১৪টি ভোট এসেছে এআইএডিএমকে, বিজেডি, ওয়াইএসআর কংগ্রেস এবং বিআরএস-এর মতো দলগুলো থেকে। এই জোটের মূল চমক ছিল তামিলনাড়ুর এআইএডিএমকে, যারা সম্প্রতি বিজেপির সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনায় ছিল। দলটির নেতা এম. থাম্বিদুরাই রাজ্যসভায় গভীর রাতে একটি জোরালো বক্তৃতায় বলেন, “মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এই বিল তাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে।” তামিলনাড়ু বিধানসভায় এর আগে ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে প্রস্তাব সমর্থনের পর এই অবস্থান তাদের ধারাবাহিকতার প্রমাণ।
বিজেডির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব
বিজু জনতা দল (বিজেডি) এই ভোটে একটি বিভক্ত ছবি তুলে ধরেছে। দলের সাত সদস্যের মধ্যে চারজন বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। বিজেডি সাংসদ দেবাশীষ সামন্ত্রয় বলেন, “আমাদের দলীয় হুইপ জারি করা হয়নি। সদস্যরা তাদের বিবেকের তাগিদে ভোট দিয়েছেন।” এই সিদ্ধান্ত দলের অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্য এবং কৌশলগত দ্বিধাকে সামনে এনেছে, যা ওড়িশার রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে।
ওয়াইএসআর কংগ্রেসের প্রতিবাদ
ওয়াইএসআর কংগ্রেসও বিলের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। দলের সাংসদ ইয়েরাম ভেঙ্কটা সুব্বা রেড্ডি তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) সমালোচনা করে বলেন, “অন্ধ্র প্রদেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষে কথা বলতে টিডিপি ব্যর্থ হয়েছে। আমরা তাদের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” এই অবস্থান আঞ্চলিক রাজনীতির সঙ্গে জাতীয় আইনসভার সংযোগ ঘটিয়েছে।
কেন্দ্রের প্রতিক্রিয়া
বিজেপি সাংসদ রবি শঙ্কর প্রসাদ বিলটির পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, “এই বিল কোনও মসজিদ, দরগা বা কবরস্থানে হস্তক্ষেপ করবে না। এটি ওয়াকফ সম্পত্তির স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য।” তবে বিরোধীদের অভিযোগ, বিলটি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকারে হস্তক্ষেপের পথ প্রশস্ত করতে পারে।
কেন অবাক বিরোধীরা?
ইন্ডিয়া ব্লকের ৮১ জন সদস্য থাকলেও ছয়জনের অনুপস্থিতি এবং অ-জোট দলগুলোর সমর্থন বিরোধী ভোটকে ৯৫-এ নিয়ে গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা বিরোধী ঐক্যের দুর্বলতা এবং অপ্রত্যাশিত জোটের শক্তি প্রকাশ করেছে। লোকসভায় সহজ জয়ের পর রাজ্যসভায় এই পরাজয় কেন্দ্রীয় সরকারের জন্যও একটি সতর্কবার্তা।
কী হবে এরপর?
ওয়াকফ বিলের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। রাজ্যসভায় পরাজয়ের পর এটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে (জেপিসি) পাঠানো হতে পারে। তবে এই ঘটনা ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের জন্ম দিয়েছে, যা আগামী দিনে আরও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠবে।