এই গ্রামে গাড়ি নয়, বিমান পার্ক করা থাকে!

নয়াদিল্লি, ৬ এপ্রিল ২০২৫: কল্পনা করুন, আপনি একটি গ্রামে ঢুকলেন, আর প্রতিটি বাড়ির সামনে স্কুটার বা গাড়ির বদলে একটি বিমান দাঁড়িয়ে। অবাক লাগছে? আমেরিকার এমনই একটি গ্রাম সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এখানে পার্কিং লটে চাকার বদলে ডানা দেখা যায়। এই গ্রামের নাম ‘ফ্লাই-ইন কমিউনিটি’, যেখানে বিমান পার্ক করা শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তব। কীভাবে এমনটা সম্ভব? আসুন জেনে নিই।
বিশ্বের প্রথম এয়ার পার্ক
এই গ্রামের গল্প শুরু হয় ১৯৪৬ সালে। ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্রেসনোতে নির্মিত হয় বিশ্বের প্রথম এয়ার পার্ক—‘সিয়েরা স্কাই পার্ক’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকায় পাইলটের সংখ্যা ছিল ৪ লক্ষের বেশি। যুদ্ধ শেষে অসংখ্য বিমান অব্যবহৃত হয়ে পড়ে। তখন সিভিল অ্যারোনটিক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একটি স্মার্ট পরিকল্পনা নেয়। অবসরপ্রাপ্ত পাইলটদের জন্য এয়ার পার্ক কলোনি তৈরি করা হয়, যেখানে তারা বিমান নিয়ে বসবাস করতে পারেন। আজ বিশ্বে ৬৩০টি এয়ার পার্ক রয়েছে, যার ৬১০টিই আমেরিকায়।
কেমন এই গ্রাম?
এই কলোনিগুলো সাধারণ গ্রামের থেকে আলাদা। বাড়ির সামনে বিমান পার্কিংয়ের জন্য বিশেষ জায়গা রাখা হয়। রাস্তার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে বিমানগুলো সহজে উড়তে বা অবতরণ করতে পারে। একটি টিকটক ভিডিওতে এই দৃশ্য ধরা পড়েছে—প্রতিটি বাড়ির সামনে গর্বের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে ছোট বিমান। এই গ্রামে রানওয়ে আর বাড়ির দূরত্ব এত কম যে, বাসিন্দারা বাড়ি থেকে বেরিয়েই উড়তে পারেন।
কেন এত জনপ্রিয়?
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই গ্রামের ভিডিও ভাইরাল হতেই মানুষের প্রতিক্রিয়া ছুটেছে। একজন লিখেছেন, “আমার বাড়ির সামনে গাড়িও নেই, আর এদের বিমান!” আরেকজন মন্তব্য করেছেন, “এরা সত্যিই ভাগ্যবান।” এই কলোনির বাসিন্দারা বেশিরভাগই পাইলট বা বিমানপ্রেমী। তাদের জন্য এটি শুধু বাড়ি নয়, একটি জীবনধারা।
কীভাবে শুরু হয়েছিল?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অব্যবহৃত বিমান আর পাইলটদের জন্য এই পরিকল্পনা এসেছিল। আমেরিকার সরকার বুঝেছিল, এই সম্পদ নষ্ট করার বদলে ব্যবহার করা যেতে পারে। ফলে, এয়ার পার্ক কলোনি গড়ে ওঠে। আজ এই গ্রামগুলো শুধু বাসস্থান নয়, বিমানপ্রেমীদের জন্য একটি স্বপ্নের জগৎ। কিছু বাসিন্দা এখনও তাদের পুরনো সামরিক বিমান রক্ষণাবেক্ষণ করেন, আবার কেউ কেউ ব্যক্তিগত ছোট বিমান কিনেছেন।
বাস্তবতা কতটা আকর্ষণীয়?
এই গ্রামে থাকা সস্তা নয়। একটি বাড়ির দাম ৫০ লক্ষ থেকে কয়েক কোটি টাকা হতে পারে, বিমানের খরচ ছাড়াও। তবে বাসিন্দাদের জন্য এটি একটি বিনিয়োগ। একজন বাসিন্দা বলেন, “এখানে থাকা মানে স্বাধীনতা। আমি যখন চাই, উড়ে যাই।” এই কলোনিতে রানওয়ে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাসিন্দারা নিজেরাই খরচ বহন করেন, যা তাদের সম্প্রদায়ের ঐক্য দেখায়।
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব
টিকটক ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর এই গ্রাম নিয়ে কৌতূহল বেড়েছে। অনেকে জানতে চাইছেন, এমন জীবন কেমন হতে পারে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি আমেরিকার সৃজনশীলতা ও ঐতিহ্যের একটি নিদর্শন। তবে ভারতের মতো দেশে এমন কল্পনা এখনও দূরের স্বপ্ন, কারণ জায়গা ও অবকাঠামোর অভাব।
শেষ কথা
এই গ্রাম শুধু একটি বসতি নয়, একটি জীবনশৈলীর প্রতীক। স্কুটার বা গাড়ির বদলে বিমান পার্ক করা বাড়িগুলো আমাদের স্বপ্ন দেখতে শেখায়। আপনার কাছে এই গ্রাম কেমন লাগল? এমন জীবন কি আপনার স্বপ্নের অংশ হতে পারে?