পারফিউমের দুর্গন্ধে ক্ষোভ, বিমানে মহিলার কামড়ে আহত কেবিন ক্রু

পারফিউমের দুর্গন্ধে ক্ষোভ, বিমানে মহিলার কামড়ে আহত কেবিন ক্রু

বিমানে আরামদায়ক ভ্রমণের আশা নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও, চীনের শেনজেন এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে পারফিউমের ‘দুর্গন্ধ’ নিয়ে সৃষ্ট একটি ঘটনা বিশৃঙ্খলায় রূপ নিয়েছে। গত ১ এপ্রিল শেনজেন থেকে জিংদেজেনগামী ফ্লাইটে এক মহিলা যাত্রী তার সহযাত্রীর সুগন্ধি সহ্য করতে না পেরে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন, যা শেষ পর্যন্ত বিমানসেবিকার ওপর হামলায় গড়ায়। ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়েছে, যা বিশ্বব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

আকাশে অশান্তির শুরু

শেনজেন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ZH9539 উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই ঘটনার সূত্রপাত। একজন মহিলা যাত্রী তার পাশের সহযাত্রীর দেহ থেকে আসা গন্ধে বিরক্ত হয়ে প্রথমে অভিযোগ জানান। বিষয়টি সমাধানের পরিবর্তে তিনি নিজেই সুগন্ধি স্প্রে করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, এরপর দুই যাত্রীর মধ্যে তর্ক বাড়তে থাকে এবং শীঘ্রই তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়।

কেবিনে শৃঙ্খলা ফেরাতে এগিয়ে আসেন একজন বিমানসেবিকা। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে গিয়ে তিনি অপ্রত্যাশিত আক্রমণের শিকার হন। ক্ষিপ্ত মহিলা যাত্রী বিমানসেবিকার হাতে কামড়ে ধরেন, যা অন্য যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। “আমি শুধু শান্তি ফেরাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এমন আচরণ কল্পনাও করিনি,” বলেন আহত বিমানসেবিকা, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় এবং বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল।

এয়ারলাইন্সের প্রতিক্রিয়া ও আইনি পদক্ষেপ

শেনজেন এয়ারলাইন্স এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “১ এপ্রিল ZH9539 ফ্লাইটে উড্ডয়নের পরপরই যাত্রীদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়। আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি এবং মামলাটি স্থানীয় পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।” এয়ারলাইন্সটি আরও জানায়, তারা যাত্রী ও কর্মীদের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পুলিশ এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে, তবে অভিযুক্ত যাত্রীর পরিচয় এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়

ভাইরাল ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর নেটিজেনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এই পৃথিবীতে কেমন মানুষ আছে ভাই!” আরেকজন মন্তব্য করেছেন, “ফ্লাইটে এমন কাণ্ড কে করে?” তৃতীয় একজন প্রশ্ন তুলেছেন, “বিমানসেবিকার এতে দোষ কী ছিল?” এই ঘটনা নিয়ে হাস্যরসাত্মক মন্তব্যের পাশাপাশি যাত্রীদের আচরণ নিয়ে গভীর উদ্বেগও প্রকাশ পেয়েছে।

বিশ্লেষণ: কেন এমন ঘটনা?

বিমানে যাত্রীদের মধ্যে সামান্য কারণে উত্তেজনা বা হামলার ঘটনা বিরল নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সীমিত জায়গায় দীর্ঘ সময় থাকা, ব্যক্তিগত পছন্দের পার্থক্য এবং মানসিক চাপ এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য দায়ী হতে পারে। “একজনের পছন্দ অন্যের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠলে সংঘাত অনিবার্য,” বলেন বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ লি চেন। তিনি আরও যোগ করেন, “কেবিন ক্রুদের প্রশিক্ষণে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আরও জোর দেওয়া উচিত।”

গত বছর চীনে অন্তত তিনটি অনুরূপ ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যেখানে যাত্রীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। এই প্রবণতা বিমান সংস্থাগুলোর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

শিক্ষা ও সমাধান

এই ঘটনা কেবল একটি ভাইরাল ভিডিওর গল্প নয়, বরং বিমানে যাত্রীদের আচরণ এবং দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। শেনজেন এয়ারলাইন্সের মতো সংস্থাগুলোর জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা—যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো এবং কঠোর নীতি প্রয়োগ এখন সময়ের দাবি। অন্যদিকে, পারফিউমের গন্ধ যে কারও জন্য এতটা বড় সমস্যা হতে পারে, তা অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য।

এই ঘটনা শেষ পর্যন্ত আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সহনশীলতা ও শৃঙ্খলা ছাড়া আকাশের সফরও অশান্তিতে ভরে উঠতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *