সমর্থকদের কটূক্তিতে ক্ষিপ্ত খুশদিল, মাঠ ছেড়ে আক্রমণের চেষ্টা

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তানের ৪৩ রানের হারের পর মাঠের বাইরে উত্তপ্ত ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন অলরাউন্ডার খুশদিল শাহ। ম্যাচ শেষে সমর্থকদের ক্রমাগত কটূক্তি সহ্য করতে না পেরে তিনি দর্শকদের দিকে আক্রমণাত্মকভাবে ছুটে যান। নিরাপত্তা কর্মী ও সাপোর্ট স্টাফদের দ্রুত হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে এ ঘটনা পাকিস্তান ক্রিকেটের চলমান সংকটকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
মাঠের পরাজয়, তারপর উত্তেজনা
মাউন্ট মাউঙ্গানুইয়ের বে ওভালে শনিবার অনুষ্ঠিত তৃতীয় ওয়ানডেতে বৃষ্টির কারণে ৪২ ওভারে সীমাবদ্ধ ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ২৬৪/৮ রান করে। জবাবে পাকিস্তান ২২১ রানে গুটিয়ে যায়। বাবর আজমের ৫০ ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের ৩৭ সত্ত্বেও দলের ব্যাটিং ধস নামে। এই হারের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়।
কিন্তু ম্যাচের পর আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে খুশদিল শাহের আচরণ। প্লেয়িং ইলেভেনে না থাকা এই ক্রিকেটার দর্শকদের একটি অংশের দিকে ছুটে যান। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ভক্তরা পাকিস্তান দলের ব্যর্থতা নিয়ে কটাক্ষ করছিলেন, যা ৩০ বছর বয়সী এই খেলোয়াড়ের ধৈর্যচ্যুতি ঘটায়। নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে জোর করে মাঠ থেকে সরিয়ে নিয়ে যান।
পিসিবি’র বিবৃতি ও বিতর্ক
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) দ্রুত একটি বিবৃতি জারি করে ঘটনার ব্যাখ্যা দেয়। “বিদেশী দর্শকদের দ্বারা জাতীয় খেলোয়াড়দের প্রতি অশালীন ভাষা ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ম্যাচ চলাকালীন পাকিস্তান বিরোধী স্লোগান উঠলে খুশদিল শাহ তাদের থামতে অনুরোধ করেন। কিন্তু আফগান দর্শকরা পশতু ভাষায় আরও অপমানজনক মন্তব্য করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে,” বলা হয় বিবৃতিতে। পিসিবি’র অভিযোগের পর স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ দুই দর্শককে বের করে দেয়।
ক্রিকেটারের আচরণে প্রশ্ন
এ ঘটনা পাকিস্তান ক্রিকেটে শৃঙ্খলার অভাব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। ক্রীড়া বিশ্লেষক আহমেদ খান বলেন, “খুশদিলের প্রতিক্রিয়া তার হতাশার প্রকাশ হতে পারে, কিন্তু একজন পেশাদার ক্রিকেটারের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। মাঠে-মাঠের বাইরে শান্ত থাকা তাদের দায়িত্ব।” তিনি আরও যোগ করেন, “নিউজিল্যান্ড সফরে দলের ব্যর্থতা ভক্তদের ক্ষোভের কারণ, তবে এটি খেলোয়াড়দের আচরণের অজুহাত হতে পারে না।”
গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হারিস রউফের সঙ্গেও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছিল, যখন তিনি সমর্থকদের সমালোচনায় ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। এ ধরনের পুনরাবৃত্তি পাকিস্তান ক্রিকেটের ইমেজের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়
ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর নেটিজেনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একজন লিখেছেন, “খুশদিলের জায়গায় আমিও ক্ষেপে যেতাম। সমর্থকদেরও সীমা মানা উচিত।” আরেকজন মন্তব্য করেছেন, “ক্রিকেটারদের এভাবে মাঠ ছাড়া লজ্জার।” ঘটনাটি ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
দলের ব্যর্থতার প্রতিফলন?
নিউজিল্যান্ড সফরে পাকিস্তানের হতশ্রী পারফরম্যান্স দলের অভ্যন্তরীণ চাপের ইঙ্গিত দেয়। পাঁচ টি-টোয়েন্টিতে ৪-১ এবং তিন ওয়ানডেতে ৩-০ হার দলের দুর্বলতা উন্মোচন করেছে। “এই হারগুলো শুধু মাঠের নয়, মানসিকভাবেও দলকে ভেঙে দিয়েছে। খুশদিলের প্রতিক্রিয়া তার প্রমাণ,” বলেন সাবেক ক্রিকেটার রশিদ লতিফ।
কী শিক্ষা?
এ ঘটনা পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য একটি সতর্কতা। খেলোয়াড়দের মানসিক প্রশিক্ষণ ও শৃঙ্খলার ওপর জোর দেওয়া এখন সময়ের দাবি। একইসঙ্গে, সমর্থকদের আচরণও নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। খুশদিল শাহের এই কাণ্ড ক্রিকেটের চেয়ে বেশি আলোচনায় এলেও, এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—খেলার সৌন্দর্য বজায় রাখতে সব পক্ষের দায়িত্বশীলতা জরুরি।