শেয়ার বাজারে দীর্ঘ বিরতি: ৯ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কেন বন্ধ?

মুম্বাই, ৬ এপ্রিল ২০২৫: ভারতীয় শেয়ার বাজার আগামী সপ্তাহে একটি অস্বাভাবিক দীর্ঘ বিরতির মুখে পড়তে চলেছে। ৯ এপ্রিলের ট্রেডিং সেশনের পর বিনিয়োগকারীদের পরবর্তী লেনদেনের জন্য ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই সময়ে মাত্র একদিন (১১ এপ্রিল) বাজার খোলা থাকলেও, ধারাবাহিক ছুটি ও সাপ্তাহিক বন্ধের কারণে বাকি দিনগুলোতে কোনো কারবার হবে না। কিন্তু এই বিরতির পেছনে কারণ কী, এবং এর প্রভাব কী হতে পারে? আসুন বিস্তারিত জানি।
ছুটির সময়সূচী
বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (বিএসই) এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই)-এর ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ৯ এপ্রিলের পর বাজারের কার্যক্রম এভাবে বন্ধ থাকবে:
- ১০ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার): মহাবীর জয়ন্তী—জৈন সম্প্রদায়ের এই গুরুত্বপূর্ণ উৎসব উপলক্ষে বাজার বন্ধ।
- ১১ এপ্রিল (শুক্রবার): বাজার খোলা থাকবে, একমাত্র ট্রেডিং দিন।
- ১২-১৩ এপ্রিল (শনিবার-রবিবার): সাপ্তাহিক ছুটি।
- ১৪ এপ্রিল (সোমবার): ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর জয়ন্তী—ভারতরত্নের জন্মদিনে জাতীয় ছুটি।
এইভাবে, ৯ এপ্রিলের পর ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার বাজার পুনরায় খুলবে। এই দীর্ঘ বিরতি বিনিয়োগকারীদের জন্য অপ্রত্যাশিত নয়, কারণ বিএসই ও এনএসই বছরের শুরুতেই ছুটির তালিকা প্রকাশ করে।
বৈশ্বিক বাজারের সম্ভাব্য প্রভাব
এই সময়ে ভারতীয় বাজার বন্ধ থাকলেও, বিশ্ববাজারে লেনদেন অব্যাহত থাকবে। “যদি এই পাঁচ দিনে আন্তর্জাতিক বাজারে বড় কোনো অর্থনৈতিক ঘটনা বা অস্থিরতা দেখা দেয়—যেমন মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হারে পরিবর্তন বা ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা—তবে তার প্রভাব ১৫ এপ্রিল ভারতীয় বাজারে প্রতিফলিত হতে পারে,” বলেন শেয়ার বাজার বিশ্লেষক রাকেশ মেহতা। তিনি যোগ করেন, “বিনিয়োগকারীদের এই সময়ে বিশ্ববাজারের গতিবিধি নজরে রাখা উচিত।”
গত বছরের নভেম্বরে দীপাবলির সময়ও অনুরূপ দীর্ঘ বিরতি দেখা গিয়েছিল, যখন বৈশ্বিক তেলের দামে ওঠানামা ভারতীয় বাজারে প্রভাব ফেলেছিল। এবারও এমন কিছুর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
কোন বিভাগে ছুটি?
বিএসই ও এনএসই জানিয়েছে, ১০ ও ১৪ এপ্রিল ইক্যুইটি, ইক্যুইটি ডেরিভেটিভস এবং সিকিউরিটিজ লেন্ডিং অ্যান্ড বোরোইং (এসএলবি) বিভাগে কোনো লেনদেন হবে না। তবে, ১১ এপ্রিল সব বিভাগে স্বাভাবিক কারবার চলবে। “এই ছুটি শুধু শেয়ার বাজারের জন্যই নয়, ব্যাঙ্ক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানেও প্রযোজ্য,” জানান একজন বিএসই কর্মকর্তা।
বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়া
দীর্ঘ বিরতি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। “একদিনের জন্য খুলে আবার বন্ধ হওয়া বিরক্তিকর। আমি ১১ এপ্রিল ট্রেড করার পরিকল্পনা করছি না, কারণ এরপর তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে,” বলেন মুম্বাইয়ের বিনিয়োগকারী সুধীর পাটিল। অন্যদিকে, দিল্লির ট্রেডার রিনা শর্মা মনে করেন, “এই বিরতি আমাদের বাজার বিশ্লেষণের জন্য সময় দেবে। ১৫ এপ্রিল শক্তিশালী শুরু হতে পারে।”
বিশ্লেষণ: কেন গুরুত্বপূর্ণ এই বিরতি?
ভারতীয় শেয়ার বাজারে বছরে গড়ে ১২-১৫টি ছুটি থাকে, কিন্তু এবারের মতো দীর্ঘ বিরতি বিরল। “এটি বিনিয়োগকারীদের কৌশল পুনর্বিবেচনার সুযোগ দেয়। তবে, বিশ্ববাজারের অস্থিরতা ঝুঁকি বাড়াতে পারে,” বলেন অর্থনীতিবিদ প্রিয়া সিং। তিনি যোগ করেন, “১৫ এপ্রিল বাজারের প্রাথমিক প্রবণতা বৈশ্বিক সংকেতের ওপর নির্ভর করবে।”
এই সময়ে সেনসেক্স ও নিফটির গতিপথও আলোচনায়। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও, এই বিরতি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সতর্কতা তৈরি করেছে। “আমরা আশা করছি, ১৫ এপ্রিল বাজার স্থিতিশীল থাকবে। তবে বড় ওঠানামার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে,” জানান মেহতা।