৪০ ঘণ্টার দুর্ভোগ: ভার্জিন আটলান্টিকের যাত্রীরা তুরস্কে আটকে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন

৪০ ঘণ্টার দুর্ভোগ: ভার্জিন আটলান্টিকের যাত্রীরা তুরস্কে আটকে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন

লন্ডন থেকে মুম্বাইগামী ভার্জিন আটলান্টিকের একটি ফ্লাইটে থাকা ২৫০ জনের বেশি যাত্রী, যাদের মধ্যে অনেকেই ভারতীয়, তুরস্কের দিয়ারবাকির বিমানবন্দরে ৪০ ঘণ্টারও বেশি সময় আটকে থাকার পর অবশেষে শুক্রবার রাত ৯টায় মুম্বাই পৌঁছেছেন। কিন্তু এই দীর্ঘ অপেক্ষার সময় তাদের খাদ্য, জল ও মৌলিক সুবিধার অভাবে যে কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে, তা নিয়ে যাত্রীরা এখন ক্ষোভে ফুঁসছেন। একটি টয়লেট, কম্বলহীন ঠান্ডা রাত আর অপর্যাপ্ত খাবার—এই অভিজ্ঞতা তাদের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছিল।

জরুরি অবতরণ থেকে দীর্ঘ দুর্ভোগ

গত ২ এপ্রিল, বুধবার লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট VS358 মুম্বাইয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু পথে এক যাত্রীর স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থার কারণে বিমানটি তুরস্কের দিয়ারবাকির বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। এরপর ‘হার্ড ল্যান্ডিং’-এর কারণে বিমানে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়, যা এটিকে উড্ডয়নের অযোগ্য করে তোলে। ফলে যাত্রীরা বিমানবন্দরে আটকে পড়েন।

যাত্রীদের অভিযোগ, প্রথম ২৪ ঘণ্টা তাদের পর্যাপ্ত খাবার বা জল দেওয়া হয়নি। “২৫০ জনের বেশি মানুষের জন্য মাত্র একটি টয়লেট ছিল। আমরা মেঝে আর বেঞ্চে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে রাত কাটিয়েছি, কম্বল পর্যন্ত দেওয়া হয়নি,” বলেন এক যাত্রী।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভের ঝড়

এই অবহেলার বিরুদ্ধে যাত্রী ও তাদের পরিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ‘এক্স’ ব্যবহারকারী হনুমান দাস লিখেছেন, “আমার পরিবারসহ ২৫০ জনের বেশি যাত্রীর প্রতি ভার্জিন আটলান্টিক অমানবিক আচরণ করেছে। ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় তুরস্কের একটি সামরিক বিমানবন্দরে আটকে রাখা হয়েছে। বিবিসি বা বিশ্ব মিডিয়া কেন এটি দেখাচ্ছে না? ব্রিটিশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, আরও চাপ প্রয়োজন।”

অন্য একজন ব্যবহারকারী শার্লিন ফার্নান্দেজ লিখেছেন, “আমার আত্মীয় সেখানে আটকে আছেন। ২৪ ঘণ্টায় মাত্র একটি স্যান্ডউইচ পেয়েছেন। এক ঘণ্টা আগে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন—‘অন্তত জল আর খাবার দিন’।” এই পোস্টগুলো যাত্রীদের হতাশা ও অসহায়ত্বের চিত্র তুলে ধরেছে।

এয়ারলাইন ও দূতাবাসের প্রতিক্রিয়া

ভার্জিন আটলান্টিক প্রথমে যাত্রীদের নিজেদের ব্যবস্থায় ইস্তানবুল হয়ে মুম্বাই যাওয়ার পরামর্শ দেয়, যা সমালোচনার মুখে পড়ে। পরে ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর তারা হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে। এয়ারলাইনের এক মুখপাত্র বলেন, “যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপত্তা আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। জরুরি অবতরণ ও কারিগরি পরীক্ষার কারণে এই বিঘ্ন ঘটেছে। আমরা দুঃখিত এবং দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি।”

ভারতীয় দূতাবাসও পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা জানায়, “আমরা ভার্জিন আটলান্টিক, দিয়ারবাকির বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। ৯৯ জন ভারতীয় যাত্রীকে অস্থায়ী ভিসা দেওয়া হয়েছে এবং হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *