“ডেলিভারি বয় দলিত-ওবিসি, আম্বানি-আদানির টেবিলে কেউ নেই: রাহুলের মোদী-বিরোধী আক্রমণ”

কংগ্রেসের ৮৪তম অধিবেশনে আহমেদাবাদে মঞ্চে উঠে রাহুল গান্ধী মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রোশ প্রকাশ করেছেন। তিনি দলিত, ওবিসি ও উপজাতিদের ‘গিগ ওয়ার্কার’ হিসেবে শোষণের অভিযোগ তুলে ধরেন, আর বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী আম্বানি ও আদানির ব্যবস্থাপনায় তাদের অনুপস্থিতির সমালোচনা করেন। পাশাপাশি, বর্ণগত আদমশুমারি ও সংরক্ষণের সীমা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “তেলেঙ্গানায় যা শুরু হয়েছে, তা দিল্লিতে পৌঁছে দেশকে নতুন পথ দেখাবে।”
‘গিগ ওয়ার্কার’ ও বর্ণগত বৈষম্য
রাহুল গান্ধী তার ভাষণে শ্রমিকদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “শ্রমিকদের ‘গিগ ওয়ার্কার’ বলা হয়। তারা ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়, অ্যামাজনের প্যাকেজ ডেলিভারি করে, রাস্তায় মারা যায়। তেলেঙ্গানার বর্ণগত আদমশুমারি দেখিয়েছে, এই কাজে যারা আছে, তারা প্রায় সবাই দলিত, ওবিসি বা উপজাতি।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই তথ্য একটি “নতুন হাতিয়ার” দিয়েছে, যা দিয়ে উন্নয়নের দিকে এগোনো সম্ভব। “তেলেঙ্গানায় আমরা ওবিসি সংরক্ষণ ৪২ শতাংশে তুলেছি। এটি একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ, যা দেশকে পথ দেখাবে,” যোগ করেন তিনি।
আম্বানি-আদানির ব্যবস্থাপনায় শূন্য প্রতিনিধিত্ব
মোদী সরকারের অর্থনৈতিক নীতির সমালোচনা করে রাহুল বলেন, “আদানি ও আম্বানির কো ম্পা নির ব্যবস্থাপনা তালিকা দেখুন। একজনও দলিত, ওবিসি বা উপজাতি নেই। ৯০ শতাংশ মানুষের জন্য কিছুই নেই—শুধু দারিদ্র্য আর বেকারত্ব।” তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি খাত যেমন বিএসএনএল, এইচএএল-এর মতো প্রতিষ্ঠানে যেখানে সব সম্প্রদায়ের জন্য সুযোগ ছিল, সেগুলো এখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। “এই সম্পদ এখন আম্বানি-আদানির হাতে চলে যাচ্ছে,” বলে তিনি সরকারের বেসরকারিকরণ নীতির বিরুদ্ধে সরব হন।
অগ্নিবীর ও সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি
অগ্নিপথ প্রকল্পের সমালোচনা করে রাহুল বলেন, “আগে দলিত, ওবিসি যুবকরা সেনায় যোগ দিতে পারত। বেতন, পেনশন, শহীদের মর্যাদা পেত। এখন অগ্নিবীর হলে শহীদ হলেও পরিবার পেনশন পাবে না, মর্যাদাও নেই। এই পথ কাদের জন্য বন্ধ হলো? পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের জন্য।” তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, “আমরা ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের প্রাচীর ভাঙব। তেলেঙ্গানার মডেল সারা ভারতে ছড়িয়ে দেব।”
মোদীর নীরবতা ও অর্থনৈতিক ঝড়ের আশঙ্কা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নীরবতা নিয়ে কটাক্ষ করে রাহুল বলেন, “ট্রাম্প শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন। একটি অর্থনৈতিক ঝড় আসছে, যা লক্ষ লক্ষ মানুষের ক্ষতি করবে। মোদী ট্রাম্পের সামনে একটি শব্দও বলতে পারেননি। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বিপরীত কথা বলছেন, আর মোদী চুপচাপ বসে আছেন।” তিনি দাবি করেন, বেকারত্ব ৫০ বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, আর সরকার এই সংকটে অন্ধ।
ইন্দিরার সঙ্গে তুলনা
ইন্দিরা গান্ধীর উল্লেখ টেনে রাহুল বলেন, “ইন্দিরা বলেছিলেন, ‘আমি সোজা দাঁড়িয়ে আছি। আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী।’ কিন্তু মোদী হাঁটু গেড়ে মাথা নত করেন।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, “মহারাষ্ট্র নির্বাচনে বিজেপি জিতেছে, কিন্তু ভোটার তালিকা চেয়েও নির্বাচন কমিশন থেকে পাইনি। আরএসএসের আদর্শে স্বাধীনতা সংগ্রাম নেই। তারা সংবিধান পুড়িয়েছিল।”
বিশ্লেষণ: রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন লড়াই
রাহুল গান্ধীর এই ভাষণ কংগ্রেসের নতুন কৌশলের ইঙ্গিত দেয়—বর্ণগত আদমশুমারি ও সংরক্ষণকে হাতিয়ার করে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের ভোট একত্রিত করা। তেলেঙ্গানার সাফল্যকে জাতীয় মডেল হিসেবে তুলে ধরে তিনি মোদী সরকারের ‘বড় ব্যবসায়ী-কেন্দ্রিক’ নীতির বিরুদ্ধে জনমত গড়তে চাইছেন। তবে, বিশ্লেষকদের মতে, এই আক্রমণ কতটা ভোটে রূপান্তরিত হবে, তা নির্ভর করছে কংগ্রেসের সাংগঠনিক শক্তি ও বিরোধী ঐক্যের ওপর। “রাহুলের বক্তব্য তীক্ষ্ণ, কিন্তু বাস্তবে রূপ দেওয়া চ্যালেঞ্জিং,” বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রিয়া শর্মা।