“পুতিনের সেনা কোথায়? চীনা-কোরিয়ান ভাড়াটেরা রাশিয়ার যুদ্ধে”

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিদেশি সৈন্যদের উপস্থিতি নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—পুতিনের নিজস্ব সেনাবাহিনী কোথায় গেল? ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তাঁর বাহিনী রাশিয়ার সঙ্গে লড়াইরত দুই চীনা সৈন্যকে আটক করেছে। এই ঘটনা রাশিয়ার সামরিক শক্তি ও কৌশল নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনীর দেশটি কি ভাড়াটে সৈন্যদের ওপর নির্ভর করছে?
চীনা সৈন্যদের উপস্থিতি: ভাড়াটে, নাকি অন্য কিছু?
জেলেনস্কি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “১৫৫ জন চীনা নাগরিক ইউক্রেনের মাটিতে আমাদের বিরুদ্ধে লড়ছে।” কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা নথিতে এপ্রিলের শুরুতে ১৬৩ জন চীনা নাগরিকের রাশিয়ান বাহিনীতে যোগদানের তথ্য উঠে এসেছে। চীন অবশ্য এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, “এটি ভিত্তিহীন। আমাদের কোনও সৈন্য রাশিয়ার হয়ে লড়ছে না।” তবে, এর আগে ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ থেকে জোরপূর্বক নিয়োগ করা সৈন্যদের রাশিয়ান ফ্রন্টে দেখা গেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে—এরা কি ভাড়াটে, নাকি অন্য কোনও গোপন চুক্তির ফল?
রাশিয়ান সেনার সংকট: মনোবল ভাঙছে?
রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে ১.৫ মিলিয়ন সক্রিয় সৈন্য ও ২ মিলিয়ন রিজার্ভ রয়েছে। তবু, তিন বছরের যুদ্ধে তাদের শক্তি যেন ক্ষয়ে গেছে। যুদ্ধের শুরুতে রাশিয়ার দ্রুত জয়ের আশা থাকলেও, ইউক্রেনের প্রতিরোধ তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, রুশ সৈন্যদের মধ্যে বিষণ্ণতা ও পলায়নপরতা বেড়েছে। একটি সূত্র জানায়, “অনেকে অসুস্থতার অজুহাতে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালাচ্ছে।” এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া কি নিজের সৈন্যদের বদলে বিদেশি যোদ্ধাদের ওপর ভরসা করছে?
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে জোট: প্রকাশ্য সমর্থন
রাশিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষা চুক্তি সবার জানা। গত বছর থেকে উত্তর কোরিয়া ১০,০০০-এর বেশি সৈন্য রাশিয়ায় পাঠিয়েছে, যারা কুর্স্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, এদের মধ্যে ৪,০০০-এর বেশি হতাহত হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার এই প্রকাশ্য সমর্থন রাশিয়ার জন্য শক্তি বাড়ালেও, চীনের ক্ষেত্রে রহস্য থেকে যায়। চীন যদি সরকারিভাবে জড়িত না থাকে, তবে এই সৈন্যরা কি স্বাধীনভাবে ভাড়াটে হিসেবে কাজ করছে?
বিশ্লেষণ: রাশিয়ার দুর্বলতা প্রকাশ
বিশ্বের অন্যতম সামরিক শক্তিধর দেশ রাশিয়ার এই অবস্থা অনেকের কাছে বিস্ময়কর। রাশিয়া নিজেকে আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখলেও, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে বিদেশি সৈন্যদের ওপর নির্ভরতা তাদের দুর্বলতা ফাঁস করেছে। সামরিক বিশ্লেষক অমিত রায় বলেন, “এটি রাশিয়ার সেনাবাহিনীর মনোবল ও সংগঠনের সংকটের প্রতিফলন। দীর্ঘ যুদ্ধে তাদের সক্ষমতা কমে গেছে।” চীনা সৈন্যদের উপস্থিতি যদি ভাড়াটে হিসেবে প্রমাণিত হয়, তবে এটি রাশিয়ার জন্য আরও লজ্জার কারণ হবে।