“তেলের ওপর হুথির হুমকি: সৌদি আরবের জন্য নতুন সংকট?”

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ আবারও চড়ছে। ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা সৌদি আরবকে সরাসরি হুমকি দিয়ে বলেছে, “এই যুদ্ধে জড়ালে তেল থাকবে না, শান্তিও না।” মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুথিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের ঘোষণার পর থেকে ইয়েমেনে বিমান হামলা তীব্র হয়েছে। এরই মধ্যে হুথিদের এই হুঁশিয়ারি সৌদি তেল শিল্পের জন্য নতুন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হুথির হুঁশিয়ারি ও অতীতের ছায়া
বুধবার X প্ল্যাটফর্মে ইয়েমেনি সামরিক বাহিনী একটি বার্তায় বলেছে, “সৌদি আরব, এই যুদ্ধে যোগ দিয়ো না। জড়ালে আমরা তোমার আকাশকে আগুনের মেঘে ভরে দেব।” পোস্টের সঙ্গে ২০১৯ সালের সৌদি তেল স্থাপনায় হুথি হামলার ছবি জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা তখন বিশ্ববাজারে তেলের দামে ঝড় তুলেছিল। হুথিরা দাবি করছে, সৌদি-মার্কিন জোট ইয়েমেনে আক্রমণ চালিয়ে ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষা করছে। তাদের হুমকি স্পষ্ট—সৌদি আরব যদি আমেরিকার পাশে দাঁড়ায়, তাদের তেল অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু হবে।
মার্কিন হামলা ও ক্ষয়ক্ষতি
ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন সেনা ইয়েমেনে হুথি-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ধারাবাহিক বিমান হামলা চালাচ্ছে। সর্বশেষ হামলায় হুদায়দার আল-হাওয়াক জেলায় চার বেসামরিক নাগরিক নিহত ও কয়েক ডজন আহত হয়েছে। হুথিরা এই হামলাকে “ইসরায়েলের পক্ষে আমেরিকার প্রক্সি যুদ্ধ” হিসেবে অভিহিত করেছে। তবে, মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, এই অভিযান হুথিদের সামরিক সক্ষমতা কমানোর জন্য।
সৌদি আরবের নীরবতা
সৌদি সরকার এখনও এই হুমকির জবাবে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রিয়াদ যুদ্ধে সরাসরি জড়ানো এড়িয়ে তেল স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করছে। ২০১৫-২০২২ সালে হুথিদের সঙ্গে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের যুদ্ধে তেল শোধনাগার ও পাইপলাইনে বড় ক্ষতি হয়েছিল। সামরিক বিশ্লেষক আলী হাসান বলেন, “সৌদি আরব এখন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তারা যুদ্ধে জড়াতে চায় না, কিন্তু চাপে পড়লে আমেরিকার পাশে দাঁড়াতে বাধ্য হতে পারে।”
তেলের বাজারে উদ্বেগ
ইয়েমেনের এই হুমকি উপসাগরীয় অঞ্চলের তেল সরবরাহের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। সৌদি আরব বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর একটি, দৈনিক ১০ মিলিয়ন ব্যারেল উৎপাদন করে। ২০১৯ সালে হুথি ড্রোন হামলায় তাদের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে গিয়েছিল। তেল বিশ্লেষক রিনা শেখ বলেন, “যদি হুথিরা আবার সৌদি স্থাপনায় হামলা করে, তেলের দাম ২০% বাড়তে পারে। এটি বিশ্ব অর্থনীতিতে ধাক্কা দেবে।”