“মুখে লুকিয়ে হাজারো পোকা: জানলে নিজের মুখের প্রতি ঘৃণা জাগতে পারে!

“মুখে লুকিয়ে হাজারো পোকা: জানলে নিজের মুখের প্রতি ঘৃণা জাগতে পারে!

আপনার মুখ এই মুহূর্তে পরিষ্কার মনে হলেও তাতে হাজার হাজার ক্ষুদ্র পোকামাকড় বাস করছে। না, এগুলো খালি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু এরা ২৪ ঘণ্টা আপনার মুখকে ‘বাড়ি’ বানিয়ে সেখানে বংশবৃদ্ধি করছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই মাইক্রোস্কোপিক মাইটগুলো শুধু আপনার ত্বকের তেল খায় না, রাতে ঘুমের সময় প্রজননও করে। এই তথ্য জানলে নিজের মুখের প্রতি ঘৃণা জাগতে পারে!

মুখের অদৃশ্য বাসিন্দা

এনপিআর-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ক্ষুদ্র প্রাণীগুলো হলো ‘ডেমোডেক্স’ মাইট, যাদেরকে মাকড়সা ও টিকের মতো প্রজাতি বলা হয়। আমেরিকান মাইট বিজ্ঞানী রন ওচোয়া বলেন, “৯৯.৯% মানুষের মুখে এই মাইট থাকে। এটা এড়ানোর কোনও উপায় নেই।” এরা মুখের লোমকূপে বাস করে, বিশেষ করে নাক, ভ্রু ও চোখের পাপড়ির কাছে। দিনে তারা ত্বকের তৈলগ্রন্থি থেকে নির্গত তেলের ওপর বেঁচে থাকে, আর রাতে ঘুমের সময় বেরিয়ে এসে প্রজনন করে।

কী এই ডেমোডেক্স?

১৮৪২ সালে আবিষ্কৃত এই মাইটের দুটি প্রজাতি—‘ডেমোডেক্স ফলিকুলোরাম’ ও ‘ডেমোডেক্স ব্রেভিস’। এদের দৈর্ঘ্য মাত্র ০.৩ মিলিমিটার, তাই মাইক্রোস্কোপ ছাড়া দেখা সম্ভব নয়। ওচোয়া জানান, “একজন মানুষের শরীরে লক্ষ লক্ষ মাইট থাকতে পারে। মুখ ছাড়াও এরা শরীরের লোমের গোড়ায় বাস করে।” কুকুর-গরুর শরীরে যেমন পোকা রক্ত চোষে, এরাও ত্বকের তেল খেয়ে বেঁচে থাকে। তবে, এদের সম্পর্কে অনেক কিছুই এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্য।

কীভাবে জীবন চলে?

দিনের বেলা এই মাইটগুলো লোমকূপের গভীরে লুকিয়ে থাকে। ত্বকের সিবাম (তেল) তাদের প্রধান খাদ্য। রাতে, যখন আপনি ঘুমিয়ে পড়েন, তখন এরা বেরিয়ে এসে মুখের ওপর হামাগুড়ি দেয় ও সঙ্গী খুঁজে প্রজনন করে। “এটি তাদের জীবনচক্রের অংশ। প্রতি ১৪ দিনে একটি নতুন প্রজন্ম তৈরি হয়,” বলেন ত্বক বিশেষজ্ঞ ড. রিনা সিং। তিনি যোগ করেন, “এদের ময়লা দেখলে অনেকে নিজের মুখের প্রতি বিতৃষ্ণা অনুভব করতে পারেন।”

ক্ষতি কি করে?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই মাইটগুলো নিরীহ। তবে, অতিরিক্ত সংখ্যায় বাড়লে ত্বকের সমস্যা যেমন রোসেসিয়া বা চুলকানি হতে পারে। ড. সিং বলেন, “যাদের ত্বক তৈলাক্ত বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ক্ষেত্রে এরা সমস্যা তৈরি করতে পারে।” তবে, এদের পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়, কারণ এরা মানুষের ত্বকের স্বাভাবিক অংশ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *