“মমতার না ওয়াকফ আইনে: রাজ্য কি কেন্দ্রকে ঠেকাতে পারবে?”

“মমতার না ওয়াকফ আইনে: রাজ্য কি কেন্দ্রকে ঠেকাতে পারবে?”

কলকাতা, ১০ এপ্রিল ২০২৫: কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়াকফ সংশোধনী আইন ৮ এপ্রিল থেকে দেশজুড়ে কার্যকর হয়েছে। সংসদের দুই কক্ষে পাসের পর রাষ্ট্রপতির সম্মতি পাওয়া এই আইন নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, “বাংলায় এই আইন লাগু হবে না। আমি সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি ও অধিকার রক্ষা করব।” তবে, রাজ্য সরকার কি সত্যিই কেন্দ্রের আইন বন্ধ করতে পারে? সংবিধান কী বলে, আসুন জেনে নিই।

কেন্দ্রের আইন, রাজ্যের প্রতিবাদ

গত সপ্তাহে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর কেন্দ্রীয় সরকার একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, ওয়াকফ সংশোধনী আইন এখন কার্যকর। এই আইনের লক্ষ্য ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা স্বচ্ছ করা। তবে, মমতার এই ঘোষণা রাজনৈতিক তরঙ্গ তুলেছে। তিনি বলেন, “এই আইন সংখ্যালঘুদের ওপর আঘাত। আমরা এটি মানব না।” তাঁর এই অবস্থান কি আইনি ভিত্তি পায়, নাকি এটি রাজনৈতিক বক্তব্য মাত্র?

সংবিধান কী বলে?

ভারতীয় সংবিধানের ২৫৬ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, “সংসদে পাস হওয়া আইন কার্যকর করা রাজ্য সরকারের দায়িত্ব।” সংবিধানবিদদের মতে, কেন্দ্রের আইন মানতে রাজ্য বাধ্য। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় এবিপি নিউজকে বলেন, “মমতার বক্তব্য রাজনৈতিক। রাজ্য কেন্দ্রের আইন বন্ধ করতে পারে না। যেমন তিন তালাক আইন সারা দেশে কার্যকর হয়েছে, কোনও মুখ্যমন্ত্রী বললেই তা অকার্যকর হয় না।” তিনি উদাহরণ দেন, “কেউ তিন তালাক দিলে পুলিশ এফআইআর নিতে অস্বীকার করতে পারে না, মুখ্যমন্ত্রী যাই বলুন।”

রাজ্যের ক্ষমতা কতটা?

সংবিধানের ৩৫৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, কেন্দ্রীয় আইন না মানলে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হতে পারে। তবে, রাজ্যগুলোর হাতে আইনি পথ খোলা আছে। “কোনও আইন নিয়ে আপত্তি থাকলে রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে,” বলেন আইনজ্ঞ রমেশ সিং। এর আগে সিএএ-র সময় পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল বিরোধিতা করেছিল, কিন্তু আইন কার্যকর হয়েছে। মমতার এই অবস্থানও আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

রাজনৈতিক কৌশল?

বিজেপি মমতার এই ঘোষণাকে ‘ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি’ বলে কটাক্ষ করেছে। “মুর্শিদাবাদে হিন্দু-বিরোধী হিংসার সময় তিনি চুপ ছিলেন। এখন সংখ্যালঘু ভোটের জন্য এই নাটক,” বলেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা। তবে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, “এটি সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার লড়াই।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি আগামী নির্বাচনের জন্য মমতার কৌশল হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *