“গুগল শুনছে আপনার কথা: এই সেটিংস বন্ধ না করলে ফাঁস হবে গোপন তথ্য!”

“গুগল শুনছে আপনার কথা: এই সেটিংস বন্ধ না করলে ফাঁস হবে গোপন তথ্য!”

কখনও কি লক্ষ্য করেছেন, কোনও বিষয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার পরই ফোনে সেই বিষয়ের বিজ্ঞাপন ভেসে ওঠে? এটি কাকতালীয় নয়। গুগল আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে গোপনে কথোপকথন শুনতে পারে। ডিফল্ট সেটিংস না বন্ধ করলে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি থাকে। কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন? জানুন বিস্তারিত।

গুগল কীভাবে শোনে?

অ্যান্ড্রয়েড ফোনে গুগল অ্যাকাউন্ট দিয়ে সাইন-ইন বাধ্যতামূলক। অ্যাপ ইনস্টলের সময় বেশিরভাগ ব্যবহারকারী চিন্তা না করেই মাইক্রোফোন, ক্যামেরা বা লোকেশনের অ্যাক্সেস দিয়ে দেন। গুগলের ‘ওয়েব অ্যান্ড অ্যাপ অ্যাক্টিভিটি’ ফিচার ডিফল্টভাবে চালু থাকে, যা ফোনের মাইক্রোফোনের মাধ্যমে অডিও সংগ্রহ করতে পারে। “এই ডেটা ব্যক্তিগতকৃত বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহৃত হয়,” বলেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রাকেশ সিং। তিনি সতর্ক করে বলেন, “অজান্তেই আপনার গোপন কথোপকথন গুগলের সার্ভারে পৌঁছে যেতে পারে।”

কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন?

আপনার ফোনের গোপনীয়তা রক্ষায় কয়েকটি সহজ পদক্ষেপই যথেষ্ট। সিং পরামর্শ দেন, নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

  1. ফোনের ‘সেটিংস’-এ যান, ‘Google’ অপশনে ক্লিক করুন।
  2. ‘আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করুন’-এ ট্যাপ করুন।
  3. ‘ডেটা ও গোপনীয়তা’ বিভাগে ‘ওয়েব অ্যান্ড অ্যাপ অ্যাক্টিভিটি’ খুঁজুন।
  4. ‘অডিও ও ভিডিও কার্যকলাপ অন্তর্ভুক্ত করুন’ অপশনটি বন্ধ করুন।
  5. পরিবর্তন সংরক্ষণ করতে গুগলের শর্তাবলী গ্রহণ করুন।

এই সেটিং বন্ধ করলে গুগল আর আপনার কথোপকথন রেকর্ড করতে পারবে না। তবে, অন্যান্য অ্যাপের মাইক্রোফোন অ্যাক্সেসও পরীক্ষা করে দেখুন।

গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ

গুগল দাবি করে, তারা ব্যবহারকারীদের ডেটা সুরক্ষিত রাখে এবং বিজ্ঞাপনের জন্য বেনামে ব্যবহার করে। কিন্তু গোপনীয়তা বিশেষজ্ঞরা ভিন্ন মত পোষণ করেন। “ডিফল্ট সেটিংস ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে সম্মতি ছাড়াই ডেটা সংগ্রহের অনুমতি দেয়। এটি গোপনীয়তার লঙ্ঘন,” বলেন ডেটা সুরক্ষা আইনজীবী মীনাক্ষী রাও। তিনি যোগ করেন, “ইউরোপের GDPR-এর মতো কঠোর আইন ভারতেও প্রয়োজন।”

ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা

অনেকেই এই সমস্যা লক্ষ্য করেছেন। দিল্লির এক ব্যবহারকারী রাহুল শর্মা বলেন, “বন্ধুদের সঙ্গে ছুটির পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলছিলাম। ঘণ্টাখানেক পর ফোনে সেই জায়গার হোটেলের বিজ্ঞাপন দেখে অবাক হয়েছি।” এমন ঘটনা গুগলের ডেটা সংগ্রহ নীতির প্রতি সন্দেহ বাড়ায়।

বিশ্লেষণ: প্রযুক্তি না গোপনীয়তা?

গুগলের পরিষেবা আমাদের জীবন সহজ করলেও, এর পিছনে গোপনীয়তার মূল্য চুকাতে হচ্ছে। ব্যক্তিগতকৃত বিজ্ঞাপনের জন্য ডেটা সংগ্রহ বৈধ হলেও, ব্যবহারকারীদের অজান্তে কথোপকথন শোনা নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। ভারতে ডেটা সুরক্ষা আইন থাকলেও, এর প্রয়োগ দুর্বল। “ব্যবহারকারীদের সচেতন হওয়া ছাড়া গোপনীয়তা রক্ষা কঠিন,” বলেন রাও।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *