“ট্রাম্পের ১২৫% শুল্ক: চীনের ‘কারখানা’ ভাঙার মাস্টারপ্ল্যান?”

আমেরিকা ও চীনের মধ্যে শুল্ক যুদ্ধ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বুধবার (৯ এপ্রিল) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১২৫% শুল্ক আরোপ করেছেন, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর। এর আগে মঙ্গলবার চীনের ওপর ১০৪% শুল্ক বসানোর পর চীন পাল্টা ৮৪% শুল্ক আরোপ করে। এই টানাপোড়েনে ট্রাম্পের লক্ষ্য কী? বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি চীনের উৎপাদন খাতকে ধসিয়ে দেওয়ার কৌশল। ‘বিশ্বের কারখানা’ খ্যাত চীনের কোমর ভাঙতে চান ট্রাম্প। আসুন, গভীরে ডুব দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি।
ট্রাম্পের ঘোষণা ও চীনের জবাব
ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ-এ লিখেছেন, “চীন বিশ্ব বাজারের প্রতি সম্মান দেখায়নি। তাই আমি তাদের ওপর ১২৫% শুল্ক বসাচ্ছি, যা এখনই কার্যকর।” তিনি যোগ করেন, “চীন বুঝবে, আমেরিকা ও অন্য দেশগুলোকে শোষণের দিন শেষ।” এর আগে, ৮ এপ্রিল চীনের ওপর ১০৪% শুল্ক বসানোর পর চীন ৯ এপ্রিল আমেরিকান পণ্যে ৮৪% শুল্ক আরোপ করে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, “আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ব।” এই শুল্ক-প্রতিশুল্কের খেলায় দুপক্ষই পিছু হটছে না।
চীন: বিশ্বের উৎপাদন রাজা
চীনকে ‘বিশ্বের দোকান’ বলা হয় কেন? জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্ব উৎপাদনের ৩১% এসেছে চীন থেকে, যা ২০২৩-এ ২৯%-এ নেমেছে। তুলনায়, আমেরিকার অবদান ২০২২-এ ১৬% এবং ২০২৪-এ ১৫%। ২০১০ সালে চীন আমেরিকাকে ছাড়িয়ে উৎপাদনে শীর্ষে ওঠে। স্মার্টফোন, বৈদ্যুতিক গাড়ি, সৌর প্যানেল থেকে খেলনা—চীনের কারখানা সবকিছুতেই আধিপত্য বিস্তার করেছে। ২০২৪-এ চীন ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা বিশ্বের সাত বড় উৎপাদনকারী দেশের সম্মিলিত মূল্যের সমান।
শুল্কের প্রভাব কী হবে?
১২৫% শুল্ক মানে চীনা পণ্যের দাম আমেরিকায় আকাশছোঁয়া হবে। উদাহরণস্বরূপ, ১ লাখ টাকার পণ্য এখন ২.২৫ লাখ টাকায় আমদানি হবে। এর ফলে আমেরিকান ব্যবসায়ীরা চীনের বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হবে। “এটি চীনের রপ্তানিকে ধাক্কা দেবে। তাদের বৈশ্বিক চাহিদা কমতে পারে,” বলেন অর্থনীতিবিদ রাকেশ মেহতা। মুডি’স-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, এই শুল্ক চীনের আমেরিকা-নির্ভর রপ্তানিকে ২৫-৩৩% কমিয়ে দিতে পারে।
ট্রাম্পের কৌশল: উৎপাদন ভাঙার পরিকল্পনা?
ট্রাম্পের লক্ষ্য স্পষ্ট—চীনের উৎপাদন শক্তিকে দুর্বল করা। চীনের অর্থনীতি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। কম শ্রম খরচ, উন্নত অবকাঠামো এবং দক্ষ সাপ্লাই চেইন চীনকে ‘বিশ্বের কারখানা’ বানিয়েছে। ট্রাম্প এই মেরুদণ্ড ভাঙতে চান। “এটি একটি অর্থনৈতিক যুদ্ধ। ট্রাম্প চান উৎপাদন আমেরিকায় ফিরুক,” বলেন বাণিজ্য বিশ্লেষক সুরেশ দাস। তবে, এর ফলাফল কী হবে? চীন অন্য বাজারে ঝুঁকতে পারে, কিন্তু আমেরিকার মতো বড় বাজার হারানো সহজ নয়।
দুই দেশের বাণিজ্য সমীকরণ
চীন আমেরিকা থেকে কয়লা, পেট্রোলিয়াম, মহাকাশ পণ্য ও যন্ত্রপাতি কেনে। আমেরিকা চীন থেকে স্মার্টফোন, কম্পিউটার, পোশাক ও শিল্প সরঞ্জাম আমদানি করে। ২০২৪-এ চীন থেকে আমেরিকায় ৪৪০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য গেছে, আর আমেরিকা থেকে চীনে ১৪৫ বিলিয়ন ডলার। এই শুল্ক যুদ্ধ দুপক্ষেরই ক্ষতি করতে পারে। আমেরিকান ভোক্তাদের জন্য দাম বাড়বে, আর চীনের কারখানায় উৎপাদন কমতে পারে।