“তেজস এমকে২: ভারতের আকাশে নতুন শক্তি!”

“তেজস এমকে২: ভারতের আকাশে নতুন শক্তি!”

ভারতীয় বিমান বাহিনী (IAF) শীঘ্রই তার অস্ত্রাগারে একটি নতুন ও অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান যুক্ত করতে চলেছে—তেজস এমকে২। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত এই বিমান ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। আগামী দিনে এটি জাগুয়ার, মিরাজ ২০০০ এবং মিগ-২৯-এর মতো পুরনো বিমানগুলোকে প্রতিস্থাপন করে IAF-এর সক্ষমতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। তেজস এমকে২-কে বলা হচ্ছে ‘তেজস ২.০’, যা ভারতের স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা শিল্পের একটি জ্বলন্ত প্রমাণ। কী রয়েছে এই বিমানে? আসুন জেনে নিই।

তেজস এমকে২: প্রযুক্তির নতুন মাইলফলক

তেজস এমকে২ ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO)-এর অধীনস্থ এরোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ADA) এবং হিন্দুস্তান এরোনটিক্স লিমিটেড (HAL)-এর যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরি। এটি শুধু একটি বিমান নয়, বরং ভারতের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও স্বনির্ভরতার প্রতীক। “এটি আমাদের আকাশে শক্তি ও গর্বের প্রতিনিধিত্ব করবে,” বলেন ADA-র এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

  • দেশীয় প্রযুক্তি: এই বিমানে ৮২% উপাদান দেশে তৈরি, যা ভবিষ্যতে ৯০%-এ পৌঁছতে পারে। এর মাধ্যমে ভারত বিদেশি আমদানি কমিয়ে স্থানীয় শিল্পকে শক্তিশালী করছে।
  • শক্তিশালী ইঞ্জিন: তেজস এমকে২-এ ব্যবহৃত হবে GE-414 ইঞ্জিন, যা ৯৮ কিলোনিউটন থ্রাস্ট উৎপন্ন করে। এটি তেজস এমকে১-এর GE-404 ইঞ্জিনের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী, যা বিমানটিকে দীর্ঘ পরিসর ও ভারী অস্ত্র বহনের ক্ষমতা দেবে।

গতি ও পরিসরে অতুলনীয়

তেজস এমকে২-এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২,৩৮৫ কিলোমিটার (ম্যাক ২), যা এটিকে বিশ্বের দ্রুততম যুদ্ধবিমানগুলির তালিকায় নিয়ে যায়। এর যুদ্ধ পরিসর প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার, যা ড্রপ ট্যাঙ্ক বা এয়ার-টু-এয়ার রিফুয়েলিংয়ের মাধ্যমে আরও বাড়ানো যাবে। “এই গতি ও পরিসর এটিকে শত্রুর ওপর দ্রুত আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম করবে,” জানান IAF-এর এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

অস্ত্রশক্তি ও বৈশিষ্ট্য

তেজস এমকে২ একটি ৪.৫ প্রজন্মের মাঝারি ওজনের যুদ্ধবিমান (MWF), যা আকাশ থেকে আকাশ, আকাশ থেকে ভূমি এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধে সমানভাবে দক্ষ। এর মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হল:

  • অস্ত্র বহন ক্ষমতা: ১১টি হার্ডপয়েন্টে ৬.৫ টন পর্যন্ত অস্ত্র বহন করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে দেশীয় অস্ত্র যেমন অস্ত্র মিসাইল, ব্রহ্মোস NG, এবং বিদেশি মিসাইল যেমন মিটিওর।
  • অ্যাভিওনিক্স: উৎকৃষ্ট উত্তম AESA রাডার, ইনফ্রারেড সার্চ অ্যান্ড ট্র্যাক (IRST) সিস্টেম এবং সমন্বিত ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার স্যুট এটিকে আধুনিক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে।
  • স্টিলথ: রাডার শোষণকারী উপাদান ও টুইস্টেড এয়ার-ইনটেক ডাক্টের মাধ্যমে এটি আংশিক স্টিলথ ক্ষমতা অর্জন করবে।

উন্নয়নের সময়রেখা

প্রথম প্রোটোটাইপের রোল-আউট ২০২৫ সালের শেষে এবং প্রথম উড়ান ২০২৬-এর প্রথম প্রান্তিকে পরিকল্পিত। ২০২৮-২৯ নাগাদ এটি IAF-এ যুক্ত হবে। HAL ২০২৯ থেকে এর ব্যাপক উৎপাদন শুরু করবে। “আমরা সময়সূচি মেনে এগোচ্ছি। এটি ভারতের প্রতিরক্ষায় গেম-চেঞ্জার হবে,” বলেন HAL-এর এক প্রকৌশলী।

বিশ্লেষণ: কেন গুরুত্বপূর্ণ?

তেজস এমকে২ শুধু একটি বিমান নয়, ভারতের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগের ফসল। এটি পাকিস্তানের JF-17 থান্ডার বা চীনের J-10C-এর মতো প্রতিদ্বন্দ্বী বিমানের তুলনায় কম খরচে উচ্চ ক্ষমতা প্রদান করে। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাফাল বা F-35-এর মতো ৫ম প্রজন্মের বিমানের স্টিলথ ও নেটওয়ার্ক ক্ষমতার সঙ্গে এটি পুরোপুরি প্রতিযোগিতা করতে পারবে না। তবুও, এর কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ও দেশীয় প্রযুক্তি এটিকে বিশ্ব বাজারে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ১৬টি দেশ ইতিমধ্যে এতে আগ্রহ দেখিয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *