“টেসলার জন্য সবুজ সংকেত, BYD-এর পথে লাল বাতি: পীযূষ গোয়েলের নীতি কী বলছে?”

“টেসলার জন্য সবুজ সংকেত, BYD-এর পথে লাল বাতি: পীযূষ গোয়েলের নীতি কী বলছে?”

চীনের শীর্ষ বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা BYD (বিল্ড ইওর ড্রিমস) ভারতের দরজায় কড়া নাড়লেও সরকারের কাছ থেকে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছে না। অন্যদিকে, আমেরিকার টেসলাকে স্বাগত জানাতে ভারত লাল গালিচা বিছিয়ে দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল সম্প্রতি এই অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছেন, “দেশের কৌশলগত ও নিরাপত্তা স্বার্থের কথা মাথায় রেখে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।” কেন এই দ্বিমুখী নীতি? আসুন বিশ্লেষণ করি।

BYD-এর জন্য ‘না’: গোয়েলের বক্তব্য

মুম্বাইয়ে ভারত গ্লোবাল ফোরামে গোয়েল বলেন, “BYD-কে আমাদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তারা ভারতের নিয়ম মেনে চলবে। এখন পর্যন্ত তাদের জন্য দরজা খোলা হচ্ছে না।” তিনি ‘তৃতীয় দেশ ডাম্পিং’-এর উদাহরণ তুলে ধরে জানান, চীনা কো ম্পা নিগুলোর অন্যায্য বাণিজ্য চর্চা ভারতের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। ২০২৩ সালে BYD-এর ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাবও সরকার প্রত্যাখ্যান করেছিল। “নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থ প্রথম,” গোয়েলের এই বক্তব্য ভারতের অবস্থান পরিষ্কার করে।

চীনা কো ম্পা নির পথে কাঁটা

ভারতের সঙ্গে স্থল সীমানা ভাগ করা দেশগুলোর বিনিয়োগে সরকারি অনুমোদন বাধ্যতামূলক। চীনা কো ম্পা নিগুলোর অস্বচ্ছ মালিকানা, সরকার ও সেনার সঙ্গে সম্পর্ক এবং ভর্তুকির মাধ্যমে বাজার বিকৃতির অভিযোগ এই নীতির পেছনে রয়েছে। BYD ছাড়াও গ্রেট ওয়াল মোটরসের মতো চীনা কো ম্পা নি অনুমোদন না পেয়ে ভারত ছেড়েছে। ২০২৩-এ BYD-এর বিরুদ্ধে আমদানি উপাদানে ৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকির অভিযোগ ওঠে, যা তদন্তে রয়েছে।

টেসলার জন্য স্বাগতম

অন্যদিকে, ইলন মাস্কের টেসলা ভারতে পা রাখতে প্রস্তুত। মুম্বাই ও পুনেতে নিয়োগ শুরু হয়েছে, বিকেসি কমপ্লেক্সে প্রথম শোরুম চূড়ান্ত। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে দিল্লিতে ডিলারশিপের পরিকল্পনা রয়েছে। সরকার টেসলাকে উৎপাদন কারখানা স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করছে, যা ভারতের ইভি লক্ষ্যে সহায়ক। “টেসলার প্রবেশ ভারতের অর্থনীতি ও প্রযুক্তির জন্য গেম-চেঞ্জার হবে,” বলেন অটো বিশেষজ্ঞ রাহুল মেহতা।

BYD বনাম টেসলা: বাজারের লড়াই

BYD বিশ্বে টেসলার শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। ২০২৪-এ BYD ৪.২৭ মিলিয়ন গাড়ি বিক্রি করে ১০৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যেখানে টেসলার বিক্রি ১.৭৯ মিলিয়ন ও আয় ৯৭.৭ বিলিয়ন ডলার। ভারতে BYD ১৮ বছর ধরে রয়েছে—২০০৭-এ চেন্নাইতে প্রবেশ করে, ২০১৩-এ প্রথম ইলেকট্রিক বাস K9 চালু করে। Atto 3, Seal-এর মতো গাড়ি বিক্রি হলেও উৎপাদনের অনুমতি না পাওয়ায় এর দাম বেশি।

বিশ্লেষণ: কেন এই পার্থক্য?

ভারতের নীতি জাতীয় নিরাপত্তা ও স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষার ওপর জোর দেয়। “চীনের সঙ্গে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা BYD-এর পথে বাধা,” বলেন অর্থনীতিবিদ সুজিত রায়। টেসলার প্রবেশে চাকরি ও প্রযুক্তির সম্ভাবনা দেখা যায়, যা চীনা বিনিয়োগে ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত। BYD-এর অনুপস্থিতি টেসলা ও স্থানীয় নির্মাতাদের (যেমন টাটা, মাহিন্দ্রা) জন্য সুবিধা তৈরি করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *