“মৃত্যুর পর মাথা ন্যাড়া: শোক না বিজ্ঞানের রহস্য?”

“মৃত্যুর পর মাথা ন্যাড়া: শোক না বিজ্ঞানের রহস্য?”

হিন্দু সংস্কৃতিতে পরিবারের কারও মৃত্যুর পর মাথা ন্যাড়া করার প্রথা শতাব্দী ধরে চলে আসছে। এই রীতি কেবল শোক প্রকাশের মাধ্যম নয়, এর পেছনে ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক যুক্তি রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। “এটি শ্রদ্ধা ও স্বাস্থ্য—দুইয়ের সমন্বয়,” বলেন ধর্মতত্ত্ববিদ পণ্ডিত রামেশ্বর শর্মা। তবে, ৯৯% মানুষ এর গভীর কারণ জানেন না। কেন এই প্রথা? আসুন উন্মোচন করি।

শ্রদ্ধার প্রতীক

মৃত্যুর পর মাথা মুণ্ডন শোক ও শ্রদ্ধার একটি গভীর প্রকাশ। “চুল আমাদের সৌন্দর্যের অংশ। এটি উৎসর্গ করে আমরা মৃত আত্মার প্রতি ভালোবাসা দেখাই,” জানান শর্মা। হিন্দু বিশ্বাসে, এটি মৃতের আত্মাকে শান্তি দেয়। কিছু পরিবারে সব পুরুষ সদস্য, আবার কোথাও শুধু চিতাদাতা এই রীতি পালন করেন। “এটি একটি নীরব বার্তা—তোমার জন্য আমরা ত্যাগ স্বীকার করছি,” যোগ করেন তিনি।

স্বাস্থ্যের বিজ্ঞান

শেষকৃত্যের সময় মৃতদেহের সংস্পর্শে আসা স্বাভাবিক। “মৃতদেহে জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়,” বলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. অমিত সেন। মাথা ন্যাড়া, নখ কাটা ও স্নানের প্রথা এই ঝুঁকি কমায়। “প্রাচীনকালে এটি স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করত। আজও এর উপযোগিতা অক্ষুণ্ণ,” জানান তিনি। রোদে বসার নিয়মও শরীরের জীবাণুমুক্তি বাড়ায়।

আত্মার মোক্ষের পথ

হিন্দু বিশ্বাসে, চুল আত্মার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হতে পারে। “মৃত আত্মা চুলের মাধ্যমে পরিবারের কাছে আকৃষ্ট হয়, যা তার মোক্ষে বাধা দেয়,” বলেন জ্যোতিষী রাকেশ দাস। শেষকৃত্যের আগে চিতাদাতার মাথা মুণ্ডন এই বন্ধন ছিন্ন করে। “এটি আত্মাকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে,” যোগ করেন তিনি। এই বিশ্বাস প্রথাকে আরও গভীর করে।

বিভিন্ন রীতি

প্রথা অঞ্চলভেদে ভিন্ন। উত্তর ভারতে প্রায়ই পরিবারের সব পুরুষ মাথা ন্যাড়ান, দক্ষিণে শুধু পুত্র বা নিকটতম আত্মীয় এটি করেন। “স্থানীয় ঐতিহ্য এই রীতির রূপ দেয়,” বলেন শর্মা। তবে, মূল উদ্দেশ্য এক—শোক ও শুদ্ধি। আজও ভারতের ৮০% হিন্দু পরিবার এই প্রথা মেনে চলে।

বিশ্লেষণ: ধর্ম ও বিজ্ঞানের মেলবন্ধন

এই প্রথা শুধু আধ্যাত্মিক নয়, বৈজ্ঞানিকভাবেও যুক্তিযুক্ত। “প্রাচীনকালে স্বাস্থ্যবিধি ও বিশ্বাস একসঙ্গে এই রীতি তৈরি করেছে,” বলেন সমাজবিজ্ঞানী ড. রিনা চৌধুরী। শোকের সময় চুলের প্রতি মনোযোগ কমে, তাই মুণ্ডন ব্যবহারিকও। তবে, আধুনিক সময়ে শহুরে যুবকদের মধ্যে এর প্রচলন কমছে। “এটি ঐতিহ্যের সঙ্গে সময়ের সংঘাত,” যোগ করেন তিনি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *