গ্যাস সিলিন্ডারের দাম: পাকিস্তানে সংকট, বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা

গ্যাস সিলিন্ডারের দাম: পাকিস্তানে সংকট, বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। যেখানে পাকিস্তানে অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে রান্নার গ্যাসের দাম আকাশছোঁয়া, সেখানে বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। এই দুই দেশের গ্যাস সিলিন্ডারের দামের তুলনা করলে উঠে আসে মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি নীতি ও জনজীবনের উপর এর প্রভাবের একটি স্পষ্ট চিত্র।

পাকিস্তানে গ্যাস সিলিন্ডার: সংকটের মুখে জনগণ

পাকিস্তানে বর্তমানে একটি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ৩০০০ থেকে ৩৫০০ পাকিস্তানি রুপি পর্যন্ত। এই দাম ভারতের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি। উদাহরণস্বরূপ, ভারতে একটি ১৪.২ কেজি গার্হস্থ্য এলপিজি সিলিন্ডারের দাম গড়ে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে থাকে। পাকিস্তানে একই ধরনের সিলিন্ডারের দাম ৩৫১৯ টাকায় পৌঁছেছে বলে সাম্প্রতিক হিসেবে জানা গেছে। এছাড়া, বাণিজ্যিক খাতে ৪৫.৪ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১১,২৫১ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “গ্যাসের দাম এত বেশি যে আমাদের অনেক সময় কাঠ জ্বালিয়ে রান্না করতে হয়। এটা ২০২৫ সালের জন্য অকল্পনীয়।” ২০২৫ সালের মার্চে গার্হস্থ্য গ্যাসের দাম ছিল ২৪৭.৮২ টাকা, কিন্তু মাত্র এক মাসের ব্যবধানে এই দাম বহুগুণ বেড়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, পাকিস্তানের চলমান মুদ্রাস্ফীতি ও রুপির অবমূল্যায়ন এর পেছনে অন্যতম কারণ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত মেনে জ্বালানি ভর্তুকি কমানোয় দাম আরও চড়েছে।

বাংলাদেশে গ্যাসের দাম: তুলনামূলক স্থিতিশীলতা

অন্যদিকে, বাংলাদেশে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১২৩২ থেকে ১৪৯৮ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) প্রতি মাসে এই দাম নির্ধারণ করে, যা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলে। একজন ঢাকার ব্যবসায়ী বলেন, “দাম মাঝে মাঝে বাড়ে, কিন্তু পাকিস্তানের মতো অসহনীয় পর্যায়ে যায় না।”

বাংলাদেশে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম তুলনামূলকভাবে কম হলেও, এর ব্যবহার সীমিত। দেশের বেশিরভাগ গ্রামীণ এলাকায় এখনও প্রাকৃতিক গ্যাসের পাইপলাইনের উপর নির্ভরতা বেশি। তবে, শহরাঞ্চলে এলপিজি সিলিন্ডারের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে।

তুলনামূলক বিশ্লেষণ: অর্থনীতির প্রতিফলন

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের গ্যাস সিলিন্ডারের দামের পার্থক্য দুই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার আয়না। পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতির হার ২০২৫ সালে ২০% ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যেখানে বাংলাদেশে তা ৬-৭% এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। পাকিস্তানের জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানো এবং বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বাংলাদেশে সরকার জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে তুলনামূলক স্থিতিশীল নীতি অনুসরণ করছে, যা দাম নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

জনজীবনে প্রভাব

পাকিস্তানে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে। অনেকে বিকল্প জ্বালানির দিকে ঝুঁকলেও, কাঠ বা কয়লার দামও বেড়ে যাওয়ায় ত্রাণ মিলছে না। বাংলাদেশে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভালো হলেও, নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য এলপিজির দাম এখনও চাপ সৃষ্টি করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *