কলকাতা-নেপাল বাইক যাত্রায় দুর্ঘটনা: এক রাইডারের মর্মান্তিক মৃত্যু

কলকাতা-নেপাল বাইক যাত্রায় দুর্ঘটনা: এক রাইডারের মর্মান্তিক মৃত্যু

কলকাতা থেকে নেপালের উদ্দেশে বাইকযাত্রায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দিবাকর চক্রবর্তী (৪৫) নামে এক রাইডার। বুধবার জিটি রোডের পাওয়াই এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের সঙ্গে তাঁর বাইকের সংঘর্ষে এই দুর্ঘটনা ঘটে। তীব্র সংঘর্ষে দিবাকর ট্রাকের নিচে আটকে যান, এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় বাইকার সম্প্রদায়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনা?

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দিবাকর তাঁর চার বন্ধুর সঙ্গে ৮ এপ্রিল কলকাতার রবীন্দ্র নগর থেকে ইয়ামাহা বাইকে (নম্বর WB24BN-5382) নেপালের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। বুধবার দুপুরে জিটি রোডের পাওয়াইয়ের কাছে তাঁর বাইক রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের (নম্বর JH02BP 4265) পেছনে ধাক্কা দেয়। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের শব্দ এতটাই প্রবল ছিল যে আশপাশের লোকজন তৎক্ষণাৎ ছুটে আসেন।

চৌপারান থানার ইনচার্জ অনুপম প্রকাশ বলেন, “আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দিবাকরকে উদ্ধার করি। তাঁকে দ্রুত কমিউনিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু ততক্ষণে তিনি মারা গিয়েছিলেন।” পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, তীব্র গতি বা রাস্তার অবস্থা এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। ট্রাকচালকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

দিবাকরের যাত্রা ও স্বপ্ন

দিবাকর চক্রবর্তী পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বড় নগর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর সঙ্গে থাকা এক বন্ধু নাম প্রকাশ না করে বলেন, “দিবাকর বাইক চালানোর প্রতি উৎসাহী ছিল। নেপাল যাত্রা ছিল আমাদের স্বপ্নের একটি অংশ। এই ঘটনা আমাদের সবাইকে ভেঙে দিয়েছে।” দিবাকরের সঙ্গে থাকা অন্য চার বাইকার অক্ষত আছেন, তবে তারা গভীর শোকে মুহ্যমান।

ময়নাতদন্তের পর দিবাকরের মৃতদেহ তাঁর বন্ধুদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

বাইক দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপট

দক্ষিণ এশিয়ার ব্যস্ত জাতীয় সড়কগুলোতে বাইক দুর্ঘটনা নতুন নয়। জিটি রোড, যা ভারতের প্রাচীনতম ও ব্যস্ততম মহাসড়কগুলোর একটি, প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাস্তার অবস্থা, অতিরিক্ত গতি, এবং ট্রাফিক নিয়মের প্রতি উদাসীনতা এই ধরনের ঘটনার জন্য দায়ী। একজন ট্রাফিক বিশেষজ্ঞ বলেন, “দীর্ঘ বাইকযাত্রায় রাইডারদের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম, হেলমেটের ব্যবহার এবং রাস্তার নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।”

চৌপারানের এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, “জিটি রোডে প্রায়ই ট্রাক অবৈধভাবে পার্ক করা থাকে। প্রশাসনের উচিত এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা।”

জনজীবনে প্রভাব ও সতর্কতা

এই ঘটনা বাইকিং সম্প্রদায়ের জন্য একটি সতর্কবার্তা। দীর্ঘ দূরত্বের বাইকযাত্রা জনপ্রিয় হলেও, নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাওয়া জরুরি। পুলিশ জানিয়েছে, তারা জিটি রোডে নজরদারি বাড়াচ্ছে এবং অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *