হিন্দু-মুসলিম বন্ধুত্বের অনন্য নজির: এক কার্ডে দুই বিয়ে

হিন্দু-মুসলিম বন্ধুত্বের অনন্য নজির: এক কার্ডে দুই বিয়ে

রাজস্থানের কোটায় হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের দুই বন্ধু তাদের ৪০ বছরের গভীর বন্ধুত্বকে এক অনন্য উদাহরণে রূপ দিয়েছেন। বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী এবং আব্দুল রউফ আনসারি নামে এই দুই বন্ধু তাদের সন্তানদের বিয়ের জন্য একটি মাত্র আমন্ত্রণপত্র ছাপিয়েছেন, যা হিন্দি ও উর্দুতে লেখা। এই কার্ডে একদিকে হিন্দু রীতিতে সৌরভ চক্রবর্তীর বিয়ের বিবরণ, অন্যদিকে মুসলিম রীতিতে ইউনুস পারভেজ আনসারির নিকাহর তথ্য—একই সঙ্গে একটি সংবর্ধনার আয়োজন। এই উদ্যোগ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।

এক কার্ডে দুই বিয়ের গল্প

কার্ডটি দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন। এতে লেখা আছে, ইউনুস পারভেজ আনসারির নিকাহ ফারহিন আনসারির সাথে ১৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। বরযাত্রী সন্ধ্যা ৭টায় বোরখেদার একটি রিসোর্টে পৌঁছে এশার নামাজের পর নিকাহ সম্পন্ন হবে। অন্যদিকে, সৌরভ চক্রবর্তীর বিয়ে শ্রেষ্ঠা রাইয়ের সাথে ১৮ এপ্রিল। বরযাত্রী সন্ধ্যায় স্টেশন এলাকার একটি বিয়ের বাগানে গিয়ে মধ্যরাতে বিবাহের আচার সম্পন্ন করবে। উভয় পরিবার ১৯ এপ্রিল চন্দ্রশীল রোডের একটি রিসোর্টে যৌথভাবে ‘দাওয়াত-এ-খুশি’ নামে সংবর্ধনার আয়োজন করছে।

বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “আমরা দুজনে ৪০ বছর আগে কোটার মসজিদ গলিতে প্রতিবেশী ছিলাম। সম্পত্তির ব্যবসা শুরু করি একসঙ্গে। আমাদের পরিবার এখন একে অপরের অংশ।” আব্দুল রউফ আনসারি যোগ করেন, “ছেলেদের বিয়ের কথা এলো, তাই ভাবলাম এক কার্ডেই সব হোক। এতে আমাদের বন্ধুত্বের গভীরতা ফুটে উঠেছে।”

বন্ধুত্বের শিকড়

দুই বন্ধুর সম্পর্ক শুধু ব্যক্তিগত স্তরে সীমাবদ্ধ নয়। তারা জনকপুরীতে পাশাপাশি বাড়ি তৈরি করেছেন। বিশ্বজিৎ জানান, “আমরা একে অপরের সুখ-দুঃখে সবসময় পাশে থেকেছি। এই বিয়ে আমাদের পরিবারের একতার প্রতীক।” সৌরভ চক্রবর্তী, যিনি একটি ঔষধ বিতরণ সংস্থা চালান, বলেন, “ইউনুস আমার ভাইয়ের মতো। আমাদের বাবারা যে বন্ধন তৈরি করেছিলেন, আমরা তা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।” ইউনুস, একজন আইটি পেশাদার, যোগ করেন, “একসঙ্গে সংবর্ধনা করার সিদ্ধান্ত আমাদের পরিবারের ঐক্যের প্রমাণ।”

সম্প্রীতির বার্তা

এই ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে আলোড়ন তৈরি করেছে। কোটার একজন বাসিন্দা বলেন, “এমন সময়ে যখন সমাজে বিভেদের খবর শোনা যায়, এই কার্ড আমাদের জন্য গর্বের।” কার্ডে হিন্দি ও উর্দুর ব্যবহারও ভাষাগত সমন্বয়ের একটি উদাহরণ। স্থানীয় সমাজকর্মী রাহুল শর্মা মন্তব্য করেন, “এটি দেখায় যে ধর্ম বা সম্প্রদায় বন্ধুত্বের পথে বাধা নয়। এমন উদাহরণ সমাজে আরও ছড়িয়ে পড়া উচিত।”

বিশ্লেষণ: সামাজিক তাৎপর্য

ভারতের মতো বৈচিত্র্যময় দেশে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির এই ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু দুই পরিবারের গল্প নয়, বরং একটি বৃহত্তর সামাজিক বার্তা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন উদ্যোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রেরণা জোগায়। একজন সমাজবিজ্ঞানী বলেন, “এই কার্ড কেবল কাগজ নয়, এটি দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাসের সেতু।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *