বক্স অফিসে সানি দেওলের অপ্রতিরোধ্য আধিপত্য: ২৪ বছর আগে শাহরুখের ‘অশোকা’র পরাজয়

হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে সানি দেওলের নাম একটি অমোঘ শক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়, যিনি দেশাত্মবোধক ও অ্যাকশনধর্মী ছবির মাধ্যমে দর্শকদের হৃদয়ে রাজত্ব করেছেন। তবে ২৪ বছর আগে, ২০০১ সালের ২৬ অক্টোবর, বক্স অফিসে তাঁর অপ্রতিরোধ্য উপস্থিতি আরও একবার প্রমাণিত হয়েছিল, যখন তাঁর ছবি ‘ইন্ডিয়ান’ শাহরুখ খানের ‘অশোকা’কে সরাসরি প্রতিযোগিতায় পরাজিত করেছিল। এই ঘটনা কেবল বক্স অফিসের লড়াই নয়, বরং দুই সুপারস্টারের পেশাগত সম্পর্কের ফাটল এবং তৎকালীন হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির গতিশীলতারও একটি প্রতিচ্ছবি।
২৪ বছর আগের সেই সংঘর্ষ
২০০১ সালে, সানি দেওল অভিনীত ‘ইন্ডিয়ান’ মুক্তি পায়, যেখানে তিনি ডিসিপি রাজশেখর আজাদের চরিত্রে দেশপ্রেমের এক অতুলনীয় প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেন। একই দিনে শাহরুখ খানের ‘অশোকা’, একটি ঐতিহাসিক মহাকাব্য, বক্স অফিসে প্রবেশ করে। দুটি ছবির ধরন ও আবেদন ভিন্ন হলেও, এই সংঘর্ষ নিয়ে দর্শক ও সমালোচকদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল ছিল। “২০০১ সালে বক্স অফিসে এমন সংঘর্ষ বিরল ছিল। সানির দেশপ্রেমী ইমেজ তখন অপ্রতিরোধ্য, আর শাহরুখ তাঁর রোমান্টিক হিরো ইমেজ থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করছিলেন,” বলেন ফিল্ম ইতিহাসবিদ রাহুল ভার্মা।
‘ইন্ডিয়ান’-এর নির্মাণে খরচ হয়েছিল ১৫ কোটি টাকা, এবং ছবিটি ভারতে ৪২.৫০ কোটি টাকা আয় করে ব্লকবাস্টার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর বিপরীতে, ‘অশোকা’ নির্মাণে খরচ হয় ১২.৫ কোটি টাকা, কিন্তু ভারতে এটি মাত্র ১১.৫৪ কোটি টাকা আয় করে, যদিও বিশ্বব্যাপী আয় ছিল ২৪.৫২ কোটি টাকা। সংখ্যার এই খেলায় স্পষ্টতই সানি দেওলের ‘ইন্ডিয়ান’ শাহরুখের ‘অশোকা’র উপর ভারী পড়ে।
‘ডার’ থেকে দূরত্ব: দুই তারকার সম্পর্ক
এই সংঘর্ষের পেছনে আরও একটি মাত্রা ছিল—সানি দেওল ও শাহরুখ খানের পেশাগত সম্পর্কের তিক্ততা। ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ডার’ ছবিতে দুজনে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন, যেখানে সানি ছিলেন নায়ক এবং শাহরুখ খলনায়ক। ছবিটি ব্লকবাস্টার হলেও, এর পর থেকে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। “শাহরুখ তখন নতুন প্রজন্মের তারকা হিসেবে উঠে আসছিলেন, আর সানি ছিলেন প্রতিষ্ঠিত অ্যাকশন হিরো। তাঁদের কাজের ধরন ও দর্শকের প্রত্যাশা ভিন্ন ছিল,” বলেন প্রবীণ ফিল্ম সমালোচক মীনাক্ষী রাও। ‘ডার’-এর পর তাঁরা আর কখনও একসঙ্গে কাজ করেননি, এবং ‘ইন্ডিয়ান’ ও ‘অশোকা’র সংঘর্ষ এই ফাটলকে আরও স্পষ্ট করে।
দেওল পরিবারের উত্থান
২০০১ সালের এই জয়ের পর সানি দেওলের ক্যারিয়ারে কিছু উত্থান-পতন দেখা গেলেও, ২০২৩ সালে ‘গদর ২’ এবং সম্প্রতি ‘জাট’ ছবির মাধ্যমে তিনি আবারও বক্স অফিসে নিজের শক্তি প্রমাণ করেছেন। অন্যদিকে, তাঁর ছোট ভাই ববি দেওলও ‘অ্যানিম্যাল’-এর মতো ছবিতে প্রশংসিত হয়ে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। “দেওল পরিবারের সবচেয়ে বড় শক্তি তাঁদের স্থিতিস্থাপকতা। বক্স অফিসে ব্যর্থতার পরও তাঁরা ফিরে এসেছেন, এবং সানি পাজি এখনও দর্শকদের হৃদয়ে রাজত্ব করেন,” বলেন ফিল্ম বাণিজ্য বিশ্লেষক কৌশিক মুখোপাধ্যায়।
বক্স অফিসের শিক্ষা
‘ইন্ডিয়ান’ ও ‘অশোকা’র সংঘর্ষ থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট—দর্শকের পছন্দ এবং তারকার ইমেজ বক্স অফিসের ফলাফলে বড় ভূমিকা পালন করে। সানি দেওলের দেশপ্রেমী ইমেজ তখন দর্শকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল, যেখানে শাহরুখের ‘অশোকা’ একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে সীমিত আবেদন ফেলতে পারে। “শাহরুখের জন্য ‘অশোকা’ ছিল একটি সাহসী পদক্ষেপ, কিন্তু বাজার তখন এমন ছবির জন্য প্রস্তুত ছিল না,” যোগ করেন মুখোপাধ্যায়।
আজকের প্রেক্ষাপট
২০২৫ সালে এসে সানি দেওল এবং শাহরুখ খান দুজনেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল। শাহরুখ ‘পাঠান’ ও ‘জওয়ান’-এর মতো ছবি দিয়ে বক্স অফিসে রাজত্ব করছেন, আর সানি ‘জাট’-এর মতো ছবি দিয়ে নতুন প্রজন্মের দর্শকদেরও মুগ্ধ করছেন। তবে ২৪ বছর আগের সেই সংঘর্ষ হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হিসেবে থেকে যাবে।