ম্বাই হামলার অভিযুক্ত তাহাব্বুর রানার চাঞ্চল্যকর দাবি: ‘সন্ত্রাসীরা পাকিস্তানের সাহসিকতা পুরস্কার প্রাপ্য’

২০০৮ সালের মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম অভিযুক্ত তাহাব্বুর হুসেন রানার বিরুদ্ধে মার্কিন বিচার বিভাগের একটি বিবৃতি সম্প্রতি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, রানা তাঁর সহযোগী ডেভিড হেডলির সঙ্গে কথোপকথনে বলেছিলেন, মুম্বাই হামলার নয়জন লস্কর-ই-তৈয়বা সন্ত্রাসী পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘নিশান-ই-হায়দার’ প্রাপ্য। এমনকি তিনি হামলার ন্যায্যতা প্রমাণ করে বলেছিলেন, “ভারতীয়রা এটার প্রাপ্য ছিল।” এই মন্তব্য ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির প্রেক্ষাপটে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
মুম্বাই হামলার পরিকল্পনায় রানার ভূমিকা
জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) বর্তমানে তাহাব্বুর রানাকে মুম্বাই হামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বরের সেই হামলায় ১৬৬ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছিল। মার্কিন বিবৃতি অনুসারে, রানা হেডলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন এবং হামলার পূর্বপরিকল্পনায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। “রানা শুধু হেডলির ভারতীয় ভিসা প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেননি, বরং তাঁর অভিবাসন ব্যবসার মুম্বাই শাখা খোলার ছদ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে হামলার প্রস্তুতিতে সহযোগিতা করেছিলেন,” বলেন এনআইএ-র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
মার্কিন বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রানা হেডলিকে তাঁর অভিবাসন ব্যবসার মুম্বাই শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যদিও হেডলির এই ক্ষেত্রে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। এই পদক্ষেপকে তদন্তকারীরা হামলার জন্য মুম্বাইয়ে হেডলির উপস্থিতিকে বৈধতা দেওয়ার একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন।
এনআইএ-র অভিযোগ ও আইনি পদক্ষেপ
এনআইএ রানার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, খুন এবং বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ)-এর অধীনে মামলা দায়ের করেছে। এছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রানার প্রত্যর্পণের বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। “রানার বক্তব্য এবং তাঁর কার্যকলাপ থেকে স্পষ্ট যে তিনি হামলার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগকারী ছিলেন। তাঁর প্রত্যর্পণ ভারতের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে,” বলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক অজিত সিং।
ডেভিড হেডলি, যিনি মুম্বাই হামলার মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন, পাকিস্তানে লস্কর-ই-তৈয়বার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন এবং হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে সরাসরি ভূমিকা পালন করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হেডলি তদন্তে সহযোগিতা করার বিনিময়ে কিছুটা সুবিধা পেলেও, রানার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তাঁকে এই হামলার একটি কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
রানার বক্তব্যের প্রভাব
রানার দাবি যে হামলাকারীরা পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সম্মান প্রাপ্য এবং ভারতীয়রা এই হামলার “প্রাপ্য” ছিল, তা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। “এই ধরনের মন্তব্য শুধু সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না, বরং এটি পাকিস্তানের কিছু মহলের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রতি নীরব সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়,” বলেন নয়াদিল্লির জাতীয় নিরাপত্তা গবেষক শালিনী মেহতা। তিনি আরও যোগ করেন, “এই বিবৃতি ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে আরও জোরালো করবে, যাতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা যায়।”
আন্তর্জাতিক মাত্রা ও প্রত্যর্পণ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে রানার প্রত্যর্পণের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। তবে, আইনি জটিলতা এবং ভারত-মার্কিন সম্পর্কের গতিশীলতা এই প্রক্রিয়াকে কিছুটা ধীর করে দিয়েছে। “প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। তবে মুম্বাই হামলার মতো ঘটনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ রাহুল চৌধুরী।