প্রেম নয়, শুধুই প্রতারণা: ব্রেডক্রাম্বিং কীভাবে ডেটিং জগতকে বদলে দিচ্ছে

আজকাল প্রেমের খোঁজে মানুষ বাস্তব জীবনের সম্পর্কের চেয়ে টিন্ডার, বাম্বলের মতো ডেটিং অ্যাপ বা ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় জীবনসঙ্গী খুঁজছেন। এই ডিজিটাল ডেটিং জগতে ‘ব্রেডক্রাম্বিং’ শব্দটি ব্যাপকভাবে আলোচিত। ব্রেডক্রাম্বিং বলতে এমন সম্পর্ক বোঝায়, যেখানে কোনো প্রতিশ্রুতি থাকে না। সম্পর্কের নামকরণের ভয়ে অনেকে ক্যাজুয়াল সম্পর্ক বা ‘সিচুয়েশনশিপ’-এর দিকে ঝুঁকছেন। সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. রিয়া সেন বলেন, “ব্রেডক্রাম্বিং মানুষকে মানসিকভাবে বিভ্রান্ত করে, কারণ এতে প্রেমের ছদ্মবেশে প্রতারণা লুকিয়ে থাকে।”
ব্রেডক্রাম্বিং হলো এমন সম্পর্ক, যেখানে একজন পক্ষ প্রেমের সমস্ত বৈশিষ্ট্য দেখায়, কিন্তু সম্পর্ককে নাম দিতে বা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে অস্বীকার করে। এই ধরনের মানুষ দিনের পর দিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখে, ফোন বা মেসেজ করে না। তবে, যখন তাদের মনে হয় সঙ্গী দূরে সরে যাচ্ছে, তখন হঠাৎ যোগাযোগ শুরু করে মিষ্টি কথায় মন ভোলায়। এই আচরণে সঙ্গীর মনে আশা জাগে, কিন্তু তা কখনো পূর্ণতা পায় না। অনেক ক্ষেত্রে ফেক প্রোফাইল বা ভুয়ো ছবি দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়, যা ভুক্তভোগীদের মানসিক চাপে ফেলে।
এই ট্রেন্ডের পিছনে রয়েছে আবেগীয় অপরিপক্কতা। আধুনিক মানুষ নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তি চায়, কিন্তু প্রতিশ্রুতির দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত নয়। ব্রেডক্রাম্বিং-এর সম্পর্কে সঙ্গীকে কোনো মানসিক সহায়তা দেওয়া হয় না; বরং নিজের সুবিধা অনুযায়ী সম্পর্ক চালানো হয়। এতে এক পক্ষ শুধু প্রতীক্ষায় থাকে, আরেক পক্ষ প্রেমের নাটক চালিয়ে যায়। সমাজবিজ্ঞানী অঞ্জনা দাস বলেন, “এই ধরনের সম্পর্ক মানুষের মধ্যে বিশ্বাসের অভাব তৈরি করছে।” ডেটিং জগতে ব্রেডক্রাম্বিং-এর এই উত্থান আধুনিক সম্পর্কের জটিলতাকে আরও প্রকট করছে।