সমুদ্র মন্থনের পৌরাণিক রত্ন, হিন্দু ধর্মে কী এর মাহাত্ম্য

হিন্দু পৌরাণিক গ্রন্থে সমুদ্র মন্থনের কাহিনি ব্যাপকভাবে উল্লেখিত, বিশেষত বিষ্ণু পুরাণে এর বিস্তৃত বর্ণনা পাওয়া যায়। ভগবাन বিষ্ণুর নির্দেশে দেবতা ও অসুররা মিলে ক্ষীরসাগর মন্থন করেছিলেন, যার ফলে ১৪টি অমূল্য রত্ন প্রকাশিত হয়। অমৃত ও হলাহল বিষের আলোচনা প্রায়ই শোনা যায়, তবে এই ১৪ রত্নের পূর্ণ তালিকা ও তাদের তাৎপর্য হিন্দু ধর্মে গভীর অর্থ বহন করে। এই মন্থনের উদ্দেশ্য ছিল অমৃত প্রাপ্তি, তবে তার আগে ১৩টি অনন্য রত্ন উদ্ভূত হয়েছিল।
মন্থনের প্রেক্ষাপট ছিল মহর্ষি দুর্বাসার শাপে স্বর্গের শ্রীহীনতা। লক্ষ্মীর প্রস্থানে স্বর্গের ঐশ্বর্য হারিয়ে যায়, এবং দেবতারা বিষ্ণুর কাছে সমাধান চাইলে তিনি অসুরদের সঙ্গে মিলে সমুদ্র মন্থনের পরামর্শ দেন। মন্থনে মন্দরাচল পাহাড় মন্থনদণ্ড এবং বাসুকি নাগ রজ্জু হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রথমে হলাহল বিষ (কালকূট) প্রকাশিত হয়, যার তীব্র তাপে সকলে বিপর্যস্ত হয়। ভগবান শিব এই বিষ পান করেন, যার ফলে তাঁর কণ্ঠ নীল হয়ে ‘নীলকণ্ঠ’ নাম লাভ করেন। এরপর ক্রমান্বয়ে কামধেনু গাভী (ঋষিদের জন্য), উচ্চৈঃশ্রবা ঘোড়া (বলির জন্য), ঐরাবত হাতি (ইন্দ্রের জন্য), কৌস্তুভ মণি (বিষ্ণুর জন্য), কল্পবৃক্ষ (ইন্দ্রের জন্য), রম্ভা অপ্সরা (দেবতাদের জন্য), দেবী লক্ষ্মী (বিষ্ণুর জন্য), বারুণী মদিরা (অসুরদের জন্য), চন্দ্রমা (শিবের জন্য), পারিজাত বৃক্ষ (দেবতাদের জন্য), পঞ্চজন্য শঙ্খ (বিষ্ণুর জন্য), শারঙ্গ ধনুষ (বিষ্ণুর জন্য) এবং শেষে ধন্বন্তরি অমৃত কলস নিয়ে প্রকাশিত হন।
এই রত্নগুলির হিন্দু ধর্মে অপরিসীম তাৎপর্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কৌস্তুভ মণি ও পঞ্চজন্য শঙ্খ বিষ্ণুর শক্তি ও বিজয়ের প্রতীক। কামধেনু যজ্ঞের পবিত্রতা এবং লক্ষ্মী ঐশ্বর্যের প্রতিনিধিত্ব করেন। “এই রত্নগুলি কেবল বস্তুগত নয়, আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতীক,” বলেন পণ্ডিত রাজেশ শর্মা। অমৃত প্রাপ্তির জন্য দেব-অসুর সংঘর্ষ হয়, তবে বিষ্ণুর মোহিনী রূপে দেবতারা অমৃত লাভ করেন। এই কাহিনি হিন্দু দর্শনে সত্য ও ধর্মের জয়ের বার্তা বহন করে।