অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচন ২০২৫: জীবনযাত্রার খরচ ও ভূ-রাজনীতির লড়াই

অস্ট্রেলিয়া, একটি মহাদেশের দেশ, বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম এই জাতি আগামী ৩ মে, ২০২৫-এ সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের পরবর্তী সরকার নির্বাচন করবে। দিল্লি থেকে প্রায় ১০,৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দেশের নির্বাচন ভারতেও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। প্রায় ১.৮ কোটি ভোটার এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত নেবেন যে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজের লেবার পার্টি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরবে, নাকি বিরোধী নেতা পিটার ডাটনের লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন প্রথমবার সরকার গঠন করবে। এই নির্বাচনকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে মূল্যবৃদ্ধি, আবাসন সংকট, শক্তি নীতি, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো ইস্যুগুলো।
মূল্যবৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার খরচ
অস্ট্রেলিয়ায় গত কয়েক বছরে মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩-এ ডিমের দাম ১১% এবং বিয়ারের দাম ৪% বেড়েছে। ভাড়া আরও দ্রুত বেড়েছে—২০২৩-এ ৮.১% এবং ২০২৪-এ ৪.৮%। রিজার্ভ ব্যাংক অফ অস্ট্রেলিয়া ২০২২-এ রেপো রেট ০.৩৫% থেকে বাড়িয়ে ২০২৩-এ ৪.৩৫% করেছে, যদিও ২০২৫-এ মূল্যবৃদ্ধি কমে ৪.১% হয়েছে। লেবার সরকার কর কমানো এবং ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলে সহায়তার মাধ্যমে জনগণের উপর চাপ কমানোর চেষ্টা করছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, সরকারি ব্যয় মূল্যবৃদ্ধিকে টিকিয়ে রেখেছে।
আবাসন সংকট ও নীতি
মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব শুধু দৈনন্দিন জিনিসপত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বাড়ি কেনা বা তৈরি করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। নির্মাণ কো ম্পা নিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়ির সরবরাহ কমেছে। লেবার পার্টি ২০২৩-এ ১২ লাখ বাড়ি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু লক্ষ্য অর্জন কঠিন। তারা প্রথমবারের ক্রেতাদের জন্য ডাউন পেমেন্ট ২০% থেকে কমিয়ে ৫% করেছে। কোয়ালিশন অভিবাসন কমিয়ে এবং সুপারঅ্যানুয়েশন ফান্ড ব্যবহারের সুবিধা দিয়ে বাড়ির চাপ কমাতে চায়। তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, এই নীতিগুলো বাড়ির দাম আরও বাড়াতে পারে।
শক্তি নীতি ও চীন সম্পর্ক
অস্ট্রেলিয়ার ২০৫০ সালের মধ্যে নেট জিরো নির্গমনের লক্ষ্য রয়েছে। লেবার পার্টি ২০৩০ সালের মধ্যে ৮২% শক্তি নবায়নযোগ্য উৎস থেকে সরবরাহের পরিকল্পনা করছে, যেমন সৌর ও বায়ু শক্তি। কোয়ালিশন সাতটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার প্রথমটি ২০৩৫ সালে চালু হবে, এবং ততক্ষণ গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে চায়। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক লেবারের অধীনে উন্নত হয়েছে, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা উঠেছে। তবে ডাটনের কঠোর অবস্থান চীনের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়াতে পারে।