হাফিজ সইদের নিরাপত্তায় পাক সেনা শিবির, ভারতের প্রতিশোধের ভয়ে চারগুণ সতর্কতা

হাফিজ সইদের নিরাপত্তায় পাক সেনা শিবির, ভারতের প্রতিশোধের ভয়ে চারগুণ সতর্কতা

নয়াদিল্লি: প্রথমগাম হামলার পর ভারতের সম্ভাব্য প্রতিশোধের আতঙ্কে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই লস্কর-ই-তৈয়বা প্রধান হাফিজ সইদের ঠিকানা বদল করেছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, এই জঙ্গি নেতাকে লাহোরের মিনা মির ক্যান্টনমেন্ট এলাকার একটি পাকিস্তানি সেনা শিবিরে স্থানান্তর করা হয়েছে। নিরাপত্তা চারগুণ বাড়িয়ে এই ‘সেফ হাউস’-এ রাখা হয়েছে ২৬/১১ মুম্বাই হামলার মাস্টারমাইন্ডকে। ভারতীয় গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, প্রথমগাম হামলায় সইদের ভূমিকার তথ্য-প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান ভয় পেয়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

লস্করের ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) প্রথমগাম হামলার দায় স্বীকার করেছে, যা ভারতের কঠোর প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা বাড়িয়েছে। আইএসআই-এর উদ্বেগ, ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে গোপন অভিযান চালিয়ে সইদকে নিশানা করতে পারে। এই ভয়ে পাকিস্তান সেনা স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের (এসএসজি) প্রাক্তন কমান্ডোদের সইদের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়েছে। এছাড়া, লাহোরের মহল্লা জোহরে অবস্থিত তাঁর পুরোনো আস্তানাতেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, এই বাড়ির পাশে একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা রয়েছে, এবং ঘনবসতি এলাকায় সইদকে রাখার কৌশল ওসামা বিন লাদেন অভিযানের পর থেকে পাকিস্তানের ভয়ের প্রতিফলন।

৭৭ বছর বয়সী সইদ, যিনি ভারত, আমেরিকা ও জাতিসংঘের ওয়ান্টেড তালিকায় রয়েছেন, পাকিস্তানে কাগজে-কলমে ৪৬ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হলেও আইএসআই ও সেনার ছত্রছায়ায় সুরক্ষিত রয়েছেন। গত তিন বছরে তিনি প্রায় তিন ডজন জনসভায় ভারত-বিরোধী বক্তৃতা দিয়েছেন এবং পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর থেকে বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে ও রাওয়ালকোটের জঙ্গি ক্যাম্পে অবাধে ঘুরে বেড়িয়েছেন। লস্কর-সমর্থিত পাকিস্তান মারকাজি মুসলিম লীগ (পিএমএমএল) প্রথমগাম হামলার পর বিভিন্ন সভায় সইদের পুরোনো বক্তৃতা প্রচার করছে, যেখানে তিনি বলেছিলেন, “ভারত জল বন্ধ করলে নদীতে রক্ত বইবে।”

তবে, ভারতের প্রতিশোধের ভয়ে এখন সইদ নিজেই পাক সেনার ‘সেফ হাউস’-এ লুকিয়ে রয়েছেন। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা পড়া তদন্ত রিপোর্টে সইদের এই নতুন ঠিকানার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, এবং হাফিজ সইদের মতো জঙ্গি নেতাদের প্রতি পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতা আবারও বিশ্বের সামনে উঠে এসেছে। এই পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক শান্তির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *