গোয়ার লাইরাই দেবী মন্দির: যেখানে জাত্রায় জ্বলে ওঠে আগুনের উৎসব

দক্ষিণ গোয়ার শিরোডা গ্রামে অবস্থিত লাইরাই দেবী মন্দির দেবী লাইরাইকে উৎসর্গিত একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। স্থানীয় ও আশপাশের অঞ্চলের মানুষের কাছে এটি গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বহন করে। দেবী লাইরাইকে শক্তি, সুরক্ষা ও উর্বরতার প্রতীক হিসেবে পূজা করা হয়। প্রতি বছর মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত লাইরাই দেবী জাত্রা মন্দিরটিকে তীর্থযাত্রীদের আকর্ষণের কেন্দ্রে পরিণত করে। এই উৎসবে ভক্তরা উৎসাহ ও ভক্তি নিয়ে দেবীর বিশেষ পূজা ও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
লাইরাই দেবীর কাহিনী গোয়ার লোককথায় জড়িয়ে আছে। একটি জনপ্রিয় কাহিনী অনুসারে, লাইরাই সাত বোন ও এক ভাইয়ের সঙ্গে হাতির পিঠে চড়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন। শিরগাঁওয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাকে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে তিনি সেখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন। একবার তিনি তার ভাইয়ের উপর রাগ করেছিলেন, কারণ তিনি রান্নার জন্য কাঠ আনেননি। ক্রোধে তিনি ভাইকে লাথি মারেন, কিন্তু পরে অনুশোচনায় আগুনের মধ্য দিয়ে হাঁটতে শুরু করেন। এই ঘটনা একটি ঐতিহ্যে রূপ নেয়, যা প্রতি বছর শিরগাঁও জাত্রায় পালিত হয়।
লাইরাই দেবী জাত্রা বৈশাখ শুক্ল পঞ্চমী তিথিতে উদযাপিত হয়। এই উৎসবে ১৫ ফুট চওড়া, ১৫ ফুট লম্বা এবং ২১ ফুট উঁচু একটি অগ্নি-বেদী তৈরি করা হয়। দেবীর অগ্নি-চলনের স্মৃতিতে ভক্তরা এই জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর দিয়ে হাঁটেন, যা ভক্তি ও সাহসের প্রতীক। এই অনুষ্ঠানে হাজারো ভক্ত একত্রিত হয়ে দেবীর প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। “এই জাত্রা আমাদের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে,” বলেন একজন স্থানীয় ভক্ত, রমেশ নাইক।
লাইরাই দেবী মন্দির ও তার জাত্রা গোয়ার সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের একটি জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি। এই উৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, বরং সম্প্রদায়ের ঐক্য ও ঐতিহ্যেরও প্রতীক।