৭.২৫ কোটি টাকার বই কেনার জেরে ইউনিয়ন ব্যাঙ্কে বিতর্ক, তদন্তের দাবি

দেশের অন্যতম সরকারি ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া একটি বই ক্রয়ের কারণে বিতর্কের কেন্দ্রে। ব্যাঙ্ক প্রাক্তন প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি ভি. সুব্রামণ্যনের লেখা ‘India@100: Envisioning Tomorrow’s Economic Powerhouse’ বইয়ের প্রায় ২ লক্ষ কপি কিনতে ৭.২৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এই বইটি এখনো প্রকাশিত হয়নি, তবু ব্যাঙ্ক এটি গ্রাহক, স্কুল, কলেজ এবং গ্রন্থাগারে বিতরণের পরিকল্পনা করেছিল। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ব্যাঙ্কের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ১,৮৯,৪৫০টি পেপারব্যাক (৩৫০ টাকা প্রতি কপি) এবং ১০,৪২২টি হার্ডকভার (৫৯৭ টাকা প্রতি কপি) ক্রয়ের নির্দেশ দিয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত এখন ব্যাঙ্কের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতে ইংরেজি বইয়ের বাজারে ১০,০০০ কপি বিক্রি হলেই তা বেস্টসেলার হিসেবে গণ্য হয়। এমন পরিস্থিতিতে, প্রকাশের আগেই ২ লক্ষ কপি ক্রয় এবং রূপা পাবলিকেশন্সকে ৫০% অগ্রিম প্রদান অস্বাভাবিক বলে মনে করা হচ্ছে। বাকি অর্থ ব্যাঙ্কের ‘বিবিধ’ রাজস্ব বাজেট থেকে পরিশোধের পরিকল্পনা ছিল। অল ইন্ডিয়া ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এন. শঙ্কর ব্যাঙ্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. মণিমেখলাইকে চিঠি লিখে বলেন, “এই বিপুল অর্থ ব্যয়ের পেছনে কার নির্দেশ ছিল এবং কে এতে জড়িত ছিল, তা তদন্ত করে বের করা ব্যাঙ্কের দায়িত্ব।” এই ব্যয়কে তিনি ‘অপচয়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে সুব্রামণ্যনের আইএমএফ থেকে অপসারণের কারণে। ২০২২ সালের নভেম্বরে ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং ভুটানের প্রতিনিধিত্বকারী আইএমএফ-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া সুব্রামণ্যনের মেয়াদ ৬ মাস বাকি থাকতেই ভারত সরকার তাকে প্রত্যাহার করে। আইএমএফ নিশ্চিত করেছে, এই সিদ্ধান্ত ভারত সরকারের। সূত্র জানায়, সুব্রামণ্যনের বই প্রচারে ‘অনৈতিকতা’ এবং আইএমএফ-এর ডেটা নিয়ে সমালোচনার কারণে তিনি প্রত্যাহার হয়েছেন। এই ঘটনা ব্যাঙ্কের আর্থিক সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার প্রশ্ন তুলেছে।
এক্স-এ ব্যবহারকারীরা এই ব্যয়কে ‘দুর্নীতি’ এবং ‘প্রকাশ্য লুট’ হিসেবে অভিহিত করেছেন, তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। যদিও ব্যাঙ্ক সম্প্রতি ২০২৫ সালের মার্চ ত্রৈমাসিকে ৩,৪৭০ কোটি টাকার নিট মুনাফা অর্জন করেছে, এই বিতর্ক তার আর্থিক সুনামে প্রশ্ন তুলেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ঘটনা সরকারি ব্যাঙ্কগুলির ব্যয় নীতির উপর কঠোর নজরদারির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। সুব্রামণ্যন এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি, তবে এই বিতর্ক আগামী দিনে আরও তীব্র হতে পারে।