জেরুজালেম, ৭ মে: ইজরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের মাসাফের ইয়াত্তার খালেত আল-দাব নামে একটি বেদুইন গ্রাম কার্যত ধ্বংস করে দিয়েছে, যার ফলে শতাধিক প্যালেস্তিনীয় গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন। সোমবার (৫ মে, ২০২৫) ভোরে বুলডোজার নিয়ে হামলা চালিয়ে আইডিএফ ৯টি বাড়ি, ৫টি তাঁবু এবং গৃহপালিত পশুদের ৫টি খোয়াড় ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। স্থানীয় কাউন্সিল প্রধান মোহাম্মদ রাবিয়া জানান, এই ধ্বংসযজ্ঞে গ্রামের অধিকাংশ অবকাঠামো ধূলিসাৎ হয়েছে।

ইজরায়েলের সামরিক প্রশাসন (কোগাট) দাবি করেছে, গ্রামটি একটি সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছিল। তবে, প্যালেস্তিনীয়রা বলছেন, এই অঞ্চলে বৈধ নির্মাণের অনুমতি পাওয়া প্রায় আসাম্ভব। স্থানীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অ্যাকটিভিস্ট বাসেল আদরা অভিযোগ করেন, “৭ অক্টোবরের পর থেকে এই অঞ্চলে তিনটি অবৈধ বসতি স্থাপন করা হয়েছে। গ্রাম ধ্বংসের উদ্দেশ্য আরও বসতি গড়ে তোলা।” তিনি বলেন, এটি প্যালেস্তিনীয়দের জোরপূর্বক উচ্ছেদের অংশ।

এই ঘটনায় প্যালেস্তিনীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে এক বাসিন্দা বলেন, “আমাদের বাড়ি, জীবিকা সব শেষ। এখন আমরা কোথায় যাব?” জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ৭০ জন প্যালেস্তিনীয় নিহত এবং ৪০,০০০-এর বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। খালেত আল-দাবের ধ্বংসযজ্ঞ এই দুর্দশাকে আরও তীব্র করেছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলোতে ধ্বংসস্তূপের মাঝে হতাশায় দাঁড়িয়ে থাকা পরিবারগুলোর করুণ দৃশ্য ফুটে উঠেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধ্বংসকাণ্ড ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ইজরায়েলি বসতি সম্প্রসারণের কৌশলের অংশ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা সত্ত্বেও, ইজরায়েলের এই পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে, যা আঞ্চলিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের উচ্ছেদকে “যুদ্ধাপরাধ” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে, ইজরায়েলের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।