নারীদের সেনা প্রবেশ: সুপ্রিম কোর্টের রায়ে লিঙ্গ সমতার নতুন যুগ

নয়া দিল্লি: ৭ মে, ২০২৫-এ দিল্লির ন্যাশনাল মিডিয়া সেন্টারে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি (সেনাবাহিনী) এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং (বায়ুসেনা) যখন ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর বিস্তারিত ব্রিফিং দেন, তখন দেশবাসীর মনে গর্বের শিহরণ জাগে। পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধে পরিচালিত এই অভিযানে নারী অফিসারদের নেতৃত্ব ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল। তবে, ভারতীয় সেনায় নারীদের প্রবেশের পথচলা কখনোই মসৃণ ছিল না। দশকের পর দশক লিঙ্গভিত্তিক স্টিরিওটাইপের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাঁরা আজ এই জায়গায় পৌঁছেছেন। “নারী অফিসারদের এই অর্জন সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার উপর জয়,” বলেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক রিনা শর্মা।
১৯৫০ সালের সেনা আইনের ধারা ১২ অনুযায়ী, নারীদের নিয়মিত সেনায় নিয়োগ নিষিদ্ধ ছিল, যদি না কেন্দ্র সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্দিষ্ট শাখায় তাঁদের প্রবেশের অনুমতি দেয়। ১৯৯২ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রথম বিজ্ঞপ্তি জারি হয়, যার মাধ্যমে নারীরা সেনা ডাক পরিষেবা, জজ অ্যাডভোকেট জেনারেল (জেএজি), শিক্ষা কোর, অর্ডন্যান্স কোর এবং সার্ভিস কোরে নিয়োগের যোগ্য হন। ১৯৯৬ সালে সিগন্যাল, গোয়েন্দা, প্রকৌশল, বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক প্রকৌশল এবং আর্টিলারি শাখায় নারীদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে মহিলা বিশেষ প্রবেশ স্কিম (ডব্লিউএসইএস) বাতিল করে ১৪ বছরের শর্ট সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) চালু হয়। তবে, স্থায়ী কমিশনের (পিসি) দাবিতে নারী অফিসারদের দীর্ঘ আইনি লড়াই চলতে থাকে।
২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই. চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি অজয় রাস্তোগির ঐতিহাসিক রায় নারী অফিসারদের জন্য সমতার দ্বার উন্মোচন করে। রায়ে বলা হয়, “লিঙ্গভিত্তিক শারীরিক ও সামাজিক স্টিরিওটাইপ সমতার অধিকারের পথে বাধা হতে পারে না।” আদালত কেন্দ্রের ২০১৯ সালের নীতি, যা শুধু ভবিষ্যতের জন্য দশটি শাখায় পিসি প্রদানের কথা বলেছিল, পূর্ববর্তী প্রভাবে প্রয়োগ করার নির্দেশ দেয়। এই রায়ে কর্নেল সোফিয়া কুরেশির মতো নারীদের কৃতিত্ব তুলে ধরা হয়। তিনি ২০০৬ সালে কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১৬ সালে ‘এক্সারসাইজ ফোর্স ১৮’-এ ভারতীয় সেনা দলের নেতৃত্ব দেন।
এই রায়ের ফলে ১,৬৫৩ জন নারী অফিসারের মধ্যে অনেকেই স্থায়ী কমিশন পেয়েছেন। তবে, যুদ্ধবাহিনী (কমব্যাট আর্মস) শাখায় নারীদের প্রবেশ এখনও সীমাবদ্ধ। “নারীদের সম্পূর্ণ সমতা এখনও অধরা, তবে এই অগ্রগতি ঐতিহাসিক,” বলেন আইনজীবী মীনাক্ষী লেখি। অপারেশন সিন্দুরে সোফিয়া এবং ব্যোমিকার মতো নারীদের নেতৃত্ব প্রমাণ করে, ভারতীয় সেনায় নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি সমান দক্ষতায় দেশসেবা করছেন।