দিনমজুরি আর পড়াশোনার মাঝে ইতিহাস: সাহেবডাঙার সুমিত্রা ও বাসন্তীর জয়

দিনমজুরি আর পড়াশোনার মাঝে ইতিহাস: সাহেবডাঙার সুমিত্রা ও বাসন্তীর জয়

শান্তিনিকেতন থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে আদিবাসী অধ্যুষিত সাহেবডাঙা গ্রামে উন্নয়নের আলো এতদিন ছিল দূরের স্বপ্ন। কাঁচা বাড়ি, পানীয় জলের অভাব, ভাঙা রাস্তা আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুপস্থিতিতে এই গ্রামের ৪৬টি পরিবার জীবনযুদ্ধে লড়ছে। এমন প্রতিকূলতার মধ্যেই সুমিত্রা টুডু (২১৯ নম্বর) ও বাসন্তী টুডু (২২৯ নম্বর) প্রথমবার উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে গ্রামের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। এর আগে তারাই গ্রামের প্রথম মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হিসেবে নজির গড়েছিল। “এই সাফল্য আমাদের শুধু নিজেদের নয়, গোটা গ্রামের জন্য গর্বের,” বলেন সুমিত্রা, চোখে আনন্দাশ্রু নিয়ে। তাদের এই কৃতিত্ব গ্রামের ৬০ জন শিশু ও কিশোর-কিশোরীকে পড়াশোনার প্রতি উৎসাহিত করেছে।

ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে মা লক্ষ্মী টুডুর সঙ্গে ধান পোঁতা, কাটার মতো দিনমজুরির কাজে হাত লাগিয়েছে সুমিত্রা ও বাসন্তী। এই কঠিন পরিশ্রমের ফাঁকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া ছিল তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের পাশে ছিলেন শিক্ষক বুদ্ধিশ্বর মণ্ডল, যিনি বোলপুরের রজতপুর থেকে ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে সাহেবডাঙার শিশুদের পড়িয়েছেন। “ওদের এই সাফল্য আমার জীবনের বড় পাওনা। কোনো সরকারি সাহায্য ছাড়াই ওরা এই জায়গায় পৌঁছেছে,” বলেন মণ্ডল। গ্রামবাসী তালাবু বাস্কি যোগ করেন, “মেয়েরা আমাদের গ্রামের গর্ব। ওদের দেখে বাকি বাচ্চারা এখন পড়তে চায়।” সুমিত্রা ও বাসন্তীর লক্ষ্য বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক কুপ্রথা দূর করে শিক্ষার আলো ছড়ানো। তবে, বিশ্বভারতীর কাছাকাছি হলেও এই গ্রামের এই অসাধারণ কৃতিত্ব প্রশাসন বা কর্পোরেট মহলে এখনও উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতি পায়নি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *