ইস্তানবুল, ১৬ মে ২০২৫: তুরস্কে একাকী জীবনযাত্রার প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে, যা দেশের সামাজিক কাঠামো ও রিয়েল এস্টেট খাতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। তুরস্কের পরিসংখ্যান সংস্থা তুইক (TÜİK)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ১৪.৯% মানুষ একা বাস করতেন, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ২০% হয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন এখন একাকী জীবনযাপন করছেন। গড় পরিবারের আকারও কমেছে—২০০৮ সালে একটি পরিবারে গড়ে ৪ জন থাকলেও, ২০২৪ সালে তা ৩.১১-এ নেমেছে। এই পরিবর্তন ছোট ও সাশ্রয়ী বাড়ির চাহিদা বাড়িয়েছে, কিন্তু তুরস্কে ২০১৭ সাল থেকে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ নিষিদ্ধ, যা এই চাহিদা মেটাতে বাধা সৃষ্টি করছে।

ব্ল্যাক সি অঞ্চলের গুমুশানে শহরে ৩১.৭% মানুষ একা বাস করেন, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ, অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্বের বাটমানে এই হার মাত্র ১১.১%। রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার এতদিন শুধু নতুন বাড়ির সংখ্যার দিকে নজর দিয়েছে, কিন্তু এখন বাড়ির ধরন ও আকারের দিকেও মনোযোগ দেওয়া জরুরি। কনুতদের (KONUTDER) একটি প্রতিবেদন অনুসারে, আগামী ১০ বছরে শুধু ইস্তানবুলে ১২.২ লাখ ছোট আকারের বাড়ির প্রয়োজন হবে। ইস্তানবুলে গড় পরিবারের আকার ২০১২ সালের ৩.৫৭ থেকে ২০২৪ সালে ৩.১৩-এ নেমেছে এবং ২০৩৪ সালের মধ্যে এটি ২.৬৮-এ পৌঁছবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে, স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টের উপর নিষেধাজ্ঞা পরিস্থিতিকে জটিল করছে। এই ধরনের বাড়ি, যেখানে একটি কক্ষই লিভিং, কিচেন ও বেডরুমের কাজ করে, একাকী বাসিন্দাদের জন্য আদর্শ। রিয়েল এস্টেট ডেভেলপাররা বলছেন, “যখন মানুষ ছোট বাড়ি চায়, তখন তাদের জন্য উপযুক্ত বাড়ি নির্মাণের নীতি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।” উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ভাড়ার খরচও সমস্যাকে আরও গভীর করছে। ২০২৩ সালে ইস্তানবুলে গড় ভাড়া ১৭,০০০ তুর্কি লিরা ছাড়িয়েছে, যা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, তুরস্কের জনসংখ্যার তরুণ প্রজন্ম ও নগরায়ণের প্রভাব এই প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করছে। তরুণরা বিয়ে বা বড় পরিবার গঠনের চেয়ে একাকী জীবনযাপনকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। তুরস্ক সরকার ও রিয়েল এস্টেট খাতকে এখন এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে, যাতে সাশ্রয়ী ও উপযুক্ত বাড়ির সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।