ইন্দোনেশিয়ায় রামায়ণের জয়গান: মাত্র ২% হিন্দু, তবু প্রতিদিন রামলীলা, জমকালো দীপাবলি

ইন্দোনেশিয়ায় রামায়ণের জয়গান: মাত্র ২% হিন্দু, তবু প্রতিদিন রামলীলা, জমকালো দীপাবলি

জাকার্তা, ১৭ মে ২০২৫: বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়া, যেখানে মাত্র ২ শতাংশ হিন্দু বাস করেন, তবু সেখানে রামায়ণের জয়গান আর দীপাবলির জমকালো উৎসব বিশ্বকে মুগ্ধ করে। এই দেশে প্রতিদিন রামলীলার মঞ্চায়ন হয়, এবং রাম-সীতার গল্প সাংস্কৃতিক ধরোহর হিসেবে পালিত হয়। “ইন্দোনেশিয়ার রামায়ণ শুধু ধর্মীয় নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতির প্রাণ,” বলেন জাভার প্রাম্বানান মন্দিরের এক শিল্পী, আহমেদ রিজাল।
ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের প্রাম্বানান হিন্দু মন্দির পরিসরে রামায়ণ ব্যালে বা ‘রামকিয়েন’ বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের আকর্ষণ। এখানে মুসলিম শিল্পীরা রাম, সীতা, হনুমানের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করেন। ১৯৭১ সাল থেকে শুরু হওয়া এই নৃত্যনাটিকা গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে বিশ্বের দীর্ঘতম চলমান নৃত্যনাট্য হিসেবে স্থান পেয়েছে। বালি দ্বীপে রামলীলা এত জমকালোভাবে পালিত হয় যে রাস্তায় উৎসবের আমেজ দেখার মতো। দীপাবলির সময় পশ্চিম পাপুয়া, সুলাওয়েসি এবং সুমাত্রায় আলোর উৎসব মুখরিত হয়।
ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় দেড় হাজার হিন্দু মন্দির রয়েছে, যার বেশিরভাগ দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্যের ধাঁচে নির্মিত। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশের মন্দিরগুলো স্থানীয়দের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদেরও আকর্ষণ করে। রামকিয়েন, যা রামায়ণের স্থানীয় রূপ, এখানকার নৃত্যনাটিকায় জীবন্ত হয়ে ওঠে। যদিও চরিত্রের নাম কিছুটা ভিন্ন, গল্পটি মূলত বাল্মীকির রামায়ণেরই প্রতিধ্বনি। “রামকিয়েন আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। এটি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রতীক,” বলেন বালির সাংস্কৃতিক গবেষক নি মাদে।
ইন্দোনেশিয়ায় রাম-সীতার উপস্থিতি শুধু মঞ্চে নয়, পাথরের খোদাই থেকে শিল্পকর্মে সর্বত্র। এই দেশ প্রমাণ করে যে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা সংস্কৃতির সীমানা নির্ধারণ করতে পারে না। রামায়ণ এবং দীপাবলির এই উৎসব ইন্দোনেশিয়ার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও সমন্বয়ের উজ্জ্বল উদাহরণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *