সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে বিতর্ক, রাষ্ট্রপতির ১৪ দফা সন্দর্ভে কী হবে প্রভাব?

সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে বিতর্ক, রাষ্ট্রপতির ১৪ দফা সন্দর্ভে কী হবে প্রভাব?

রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালদের কাছে বিধানসভায় পাস হওয়া বিলের অনুমোদনের সময়সীমা নির্ধারণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের পর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদের অধীনে ১৪টি প্রশ্ন সহ একটি সন্দর্ভ পাঠিয়ে শীর্ষ আদালতের মতামত চেয়েছেন। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সন্দর্ভে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া মতামত কেবল পরামর্শমূলক হবে, বাধ্যকর নয়। এটি গত মাসে দুই বিচারপতির বেঞ্চের রায়ের উপর কোনও প্রভাব ফেলবে না। সরকারের কাছে একমাত্র বিকল্প হল পুনর্বিবেচনা যাচিকা দাখিল করা বা সংসদের মাধ্যমে পুরোনো ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
গত ৮ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট তামিলনাড়ু বনাম রাজ্যপাল মামলায় ঐতিহাসিক রায়ে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো বিলে সময়সীমার মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেয়। দুই বিচারপতির বেঞ্চ সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে রাজ্যপালের অনুমোদন ছাড়াই বিলগুলি মঞ্জুর করার নির্দেশ দেয়। উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড় এই পদক্ষেপকে ‘পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের’ মতো বিপজ্জনক বলে সমালোচনা করেন। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মামলায় ন্যূনতম পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে শুনানি হওয়া উচিত ছিল। কেশবানন্দ ভারতী মামলার রায় অনুযায়ী, নীতিগত বিষয়ে সংসদ ও সরকারের সিদ্ধান্তে আদালতের হস্তক্ষেপের সীমা নির্ধারিত। তবু সুপ্রিম কোর্ট নতুন প্রক্রিয়া তৈরি করেছে, যা সংবিধানে উল্লেখ নেই।
১৪৩ অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রিম কোর্ট পূর্বে বেশ কিছু সন্দর্ভে মতামত দিয়েছে। ১৯৫১ সালে দিল্লি লজ অ্যাক্ট এবং ১৯৫৭ সালে কেরল শিক্ষা বিলের সন্দর্ভে সাংবিধানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। তবে ১৯৯৩ সালে কাবেরী জল বিতর্ক এবং অযোধ্যা মামলায় নরসিমহা রাও সরকারের সন্দর্ভে সুপ্রিম কোর্ট মতামত দিতে অস্বীকার করে, কারণ এটি ঐতিহাসিক বা ধর্মীয় বিষয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল। ২০০২ সালে গুজরাট নির্বাচন মামলায় আদালত বলে, পুনর্বিবেচনা যাচিকার পরিবর্তে ১৪৩-এর অধীনে সন্দর্ভ পাঠানো সাংবিধানিকভাবে ভুল। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ও বলেছিলেন, সন্দর্ভে দেওয়া মতামত বাধ্যকর না হওয়া সংবিধানের দৃষ্টিকোণ থেকে অস্বাভাবিক।
রাষ্ট্রপতির এই সন্দর্ভে সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত বা কয়েকটি প্রশ্নে মতামত দিতে পারে, অথবা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যানও করতে পারে। তবে এই মতামত কেবল সাংবিধানিক স্পষ্টতার জন্য পরামর্শ হিসেবে কাজ করবে। ২জি স্পেকট্রাম মামলায় ইউপিএ সরকারের সন্দর্ভের মতো এই ক্ষেত্রেও সরকার নীতিগত বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আইনজীবীদের মতে, সরকারকে পুনর্বিবেচনা যাচিকা বা সংসদীয় আইনের মাধ্যমে এগোতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *