সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতে ভারতের বড় লাভ, চিনাব বাঁধ পরিষ্কারে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি

সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতে ভারতের বড় লাভ, চিনাব বাঁধ পরিষ্কারে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি

জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত সরকার সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করে। যদিও ১০ মে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়েছে, চুক্তিটি এখনও স্থগিত রয়েছে। এরই মধ্যে চিনাব নদীর সলাল ও বাগলিহার বাঁধে বড় আকারে সিল্ট (পলি) পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে, যার ফলে জল ভাণ্ডারের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৫-২০% বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই পদক্ষেপ ভারতের জন্য শক্তি নিরাপত্তা ও সম্পদের উন্নত ব্যবস্থাপনার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। “এটি কেবল কূটনৈতিক পদক্ষেপ নয়, জম্মু-কাশ্মীরের স্থানীয় বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের একটি বাস্তব কৌশল,” বলেন জলশক্তি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।

চিনাব নদী, হিমালয়ের উঁচু শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন, প্রচুর পরিমাণে পলি, বালি ও কঠিন কণা বয়ে আনে, যা বাঁধের জলাশয়ে জমা হয়ে ভাণ্ডার ক্ষমতা হ্রাস করে এবং টারবাইনের দক্ষতায় প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পলির কারণে সলাল (৬৯০ মেগাওয়াট) ও বাগলিহার (৯০০ মেগাওয়াট) বাঁধের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১০-২০% কমে যাচ্ছিল। সিন্ধু জল চুক্তির শর্তের কারণে ভারত এতদিন বাঁধের পলি পরিষ্কারে সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন ছিল। চুক্তি স্থগিতের পর পাকিস্তানকে পূর্ব বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই সলাল ও বাগলিহারে ফ্লাশিং (পলি অপসারণ) কাজ শুরু হয়, যা ১৯৮৭ ও ২০০৮/০৯ সালে বাঁধ নির্মাণের পর প্রথমবারের মতো সম্পন্ন হয়েছে।

এই পরিষ্কার কাজের ফলে বাঁধগুলির জল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, টারবাইনগুলি স্থিতিশীল জলচাপ পাচ্ছে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হচ্ছে। সলাল, রিয়াসি জেলায় অবস্থিত, এবং বাগলিহার, রামবন জেলায় অবস্থিত, জম্মু-কাশ্মীরের স্থানীয় বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করছে। “পলি অপসারণের ফলে বাঁধগুলি প্রায় পূর্ণ ক্ষমতায় কাজ করছে, যা এই অঞ্চলের শক্তি নিরাপত্তার জন্য বড় সাফল্য,” বলেন এনএইচপিসি-র এক প্রকৌশলী।

সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করা কেবল পাকিস্তানের জন্য চাপ সৃষ্টি করেনি, বরং ভারতের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করেছে। এই পদক্ষেপ জম্মু-কাশ্মীরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শক্তি স্বনির্ভরতার পথে একটি মাইলফলক। তবে, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, দীর্ঘমেয়াদে জল সঞ্চয় বাড়াতে নতুন অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *