তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের যৌথ অভিযানে হায়দ্রাবাদে একটি সম্ভাব্য বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা ব্যর্থ করা হয়েছে। গত ১৮ মে ২০২৫-এ অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়নগরম এবং হায়দ্রাবাদ থেকে দুই সন্দেহভাজন, সিরাজ-উর-রহমান (২৯) এবং সৈয়দ সমীর (২৮), গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের কাছ থেকে অ্যামোনিয়াম, সালফার এবং অ্যালুমিনিয়াম পাউডারের মতো বোমা তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের সন্দেহ, এই দুজন সৌদি আরবে অবস্থিত একটি আইএসআইএস মডিউলের সঙ্গে যুক্ত এবং তারা হায়দ্রাবাদে একটি ‘ডামি বিস্ফোরণ’ পরীক্ষার পরিকল্পনা করছিল।

অভিযানের বিশদ বিবরণ
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তেলেঙ্গানা কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স এবং অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশ বিজয়নগরমে সিরাজ-উর-রহমানের বাড়িতে অতর্কিত অভিযান চালায়। সিরাজ, যিনি ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক কিন্তু বেকার, অনলাইন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে বোমা তৈরির উপকরণ সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হায়দ্রাবাদের ভোইগুড়া থেকে সৈয়দ সমীর, একজন লিফট টেকনিশিয়ান, গ্রেপ্তার হন। পুলিশ জানায়, দুজনেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং বোমা তৈরির কৌশল শিখেছিল। তারা বিজয়নগরমের একটি নির্জন এলাকায় ট্রায়াল বিস্ফোরণ পরিচালনা করেছিল।

আইএসআইএস-এর সঙ্গে সংযোগ ও সংগঠন
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সিরাজ এবং সমীর ‘আল হিন্দ ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (এএইচআইএম) নামে একটি সংগঠন গঠন করেছিল এবং সৌদি আরবে অবস্থিত একটি আইএসআইএস হ্যান্ডলারের নির্দেশে কাজ করছিল। তবে, পুলিশ জানিয়েছে, তারা স্ব-উদ্বুদ্ধ (self-radicalised) হয়ে এই পরিকল্পনা করেছিল এবং কোনো পরিচিত সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে তাদের সরাসরি সংযোগের প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া উপকরণ এবং ট্রায়াল বিস্ফোরণের প্রমাণ থেকে পুলিশের ধারণা, তারা হায়দ্রাবাদে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছিল, যদিও নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু বা সময় এখনও চিহ্নিত হয়নি।

তদন্ত ও পরবর্তী পদক্ষেপ
পুলিশ এখন দুই অভিযুক্তের হেফাজতের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছে। তদন্তে জানা গেছে, গত ছয় মাস ধরে গোয়েন্দা সংস্থা সিরাজের গতিবিধি নজরে রেখেছিল। পুলিশ এই মডিউলে আরও ব্যক্তির জড়িত থাকার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। সাম্প্রতিক পাহলগাম হামলার (২২ এপ্রিল ২০২৫) পর দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, এবং এই গ্রেপ্তারি তারই অংশ। পুলিশ জনগণের কাছে সতর্কতা বজায় রাখার এবং সন্দেহজনক কার্যকলাপের তথ্য প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে।

প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য
হায়দ্রাবাদে এটি প্রথম কোনো সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা নয়। ২০০৭ সালে শহরে দুটি বোমা বিস্ফোরণে ৪২ জন নিহত হয়েছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হায়দ্রাবাদে আইএসআইএস-সংশ্লিষ্ট মডিউলের উপস্থিতি নিয়ে একাধিক তদন্ত হয়েছে। এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল যখন হায়দ্রাবাদ মিস ওয়ার্ল্ড ২০২৫-এর আয়োজন করছে, যা শহরের নিরাপত্তার গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই অভিযান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের গোয়েন্দা এবং পুলিশ বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকার প্রমাণ।