পুতিনের দমননীতি: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের উপর রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা

মস্কো, ১৯ মে ২০২৫: রাশিয়া আবারও মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে পদদলিত করার অভিযোগে আলোচনায়। এবার নিশানায় বিশ্বের শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। রাশিয়ার প্রসিকিউটর জেনারেল অফিস সোমবার ঘোষণা করেছে, অ্যামনেস্টিকে ‘অবাঞ্ছিত সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার ফলে দেশে এর সমস্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধ। এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং স্বাধীন চিন্তা ও নাগরিক স্বাধীনতার উপর সরাসরি আঘাত।
২০১৫ সালের একটি আইনের অধীনে, ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষিত সংগঠনের সঙ্গে যে কোনো সংযোগ—এমনকি তাদের প্রতিবেদন সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করাও—ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই কঠোর পদক্ষেপ ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়ার বিরোধী কণ্ঠস্বর দমনের ধারাবাহিকতার অংশ। সাংবাদিক, কর্মী বা সাধারণ নাগরিক—যে কেউ ক্রেমলিনের নীতির বিরুদ্ধে কথা বললে তাঁকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। অ্যামনেস্টি, যিনি রাশিয়ার মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিরোধীদের গ্রেপ্তার, মিডিয়া সেন্সরশিপ ও শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ড দমনের বিষয়ে বারবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, তাঁকে ক্রেমলিন এখন ‘হুমকি’ হিসেবে দেখছে।
“এই নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার মানবাধিকারের শেষ কণ্ঠকে নিঃশব্দ করার প্রয়াস,” বলেছেন অ্যামনেস্টির পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার পরিচালক মারি স্ট্রুদার্স। সংস্থাটি ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষক গ্রিগরি মেলকোনিয়ান্তসের কারাদণ্ডের মতো ঘটনার সমালোচনা করেছিল। রাশিয়ার প্রসিকিউটর অফিস অ্যামনেস্টির বিরুদ্ধে ‘রুশফোবিক প্রকল্প’ ও ‘বিদেশি এজেন্টদের অর্থায়ন’ করার অভিযোগ এনেছে, যা বিশ্লেষকরা ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ হিসেবে দেখছেন।
এই পদক্ষেপ গণতন্ত্রের মূলনীতির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্য সতর্কতা। ২০২৪ সালে রাশিয়া ৬৫টি সংস্থাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে গ্রিনপিস ও রেডিও ফ্রি ইউরোপও রয়েছে। পুতিন প্রশাসনের এই দমননীতি কেবল ক্ষমতা ধরে রাখার লক্ষ্যে, যা মানবাধিকারকে পদদলিত করছে। মানবাধিকার বনাম মস্কোর এই লড়াই এখন চিন্তার স্বাধীনতা ও দমনের মধ্যে একটি বৈশ্বিক যুদ্ধে রূপ নিয়েছে।