বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ১৫৬০ জনের গ্রেপ্তার, ইউনুস সরকারের অধীনে কী ঘটছে?

বাংলাদেশে বিরোধী দল এবং সরকারবিরোধী বিক্ষোভের উপর কঠোর দমনপীড়ন তীব্রতর হয়েছে। গত এক মাসে দেশজুড়ে ৪৮,৪০০-এরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা প্রতিদিন গড়ে ১৫৬০ জনের গ্রেপ্তারের হার নির্দেশ করে। এই সংখ্যা এই বছরের শুরুতে চালানো ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর সময়ে প্রতিদিন গড়ে ১৩৩০ জনের গ্রেপ্তারের তুলনায় বেশি। এই ব্যাপক গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়েছিল যখন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশ ত্যাগের দুই দিন পর, ১০ মে, হিংসাত্মক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন ২২৭১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যা এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ গ্রেপ্তারের রেকর্ড। সরকার দাবি করেছে, এই বিক্ষোভগুলো ছিল পরিকল্পিত এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী।
১২ মে অন্তর্বর্তী সরকার বিক্ষোভের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে চিহ্নিত করে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক অভিযান শুরু করে, যার ফলে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যসহ শতাধিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে শুধু রাজধানীতেই ১৭৫-এর বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে, যার মধ্যে ৮ জন প্রাক্তন সংসদ সদস্য রয়েছেন। পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক শাহজাদা মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, পুলিশের সক্রিয়তা বৃদ্ধির ফলে গ্রেপ্তারের সংখ্যা বেড়েছে, তবে এটিকে কোনো বিশেষ অভিযান বলা যায় না। তিনি স্বীকার করেছেন, নিষিদ্ধ দলগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা বাড়ছে।
এই কঠোর পদক্ষেপ শুধু রাজধানীতে সীমাবদ্ধ নয়। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মেট্রোপলিটন পুলিশের তালিকা অনুযায়ী, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তারা রয়েছেন যারা অস্থিরতা সৃষ্টি, অস্ত্র রাখা, চোরাচালান, ডাকাতি এবং জোরপূর্বক চাঁদাবাজির মতো কার্যকলাপে জড়িত ছিল। জেলে ক্রমবর্ধমান ভিড়ের চাপ বাড়ছে। জেলের সহকারী মহাপরিদর্শক জান্নাত-উল-ফরহাদ জানিয়েছেন, মুক্তি ও গ্রেপ্তারের ভারসাম্য জেলের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখছে। তবে, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইকবাল হুসাইন বলেন, কয়েদিদের সংখ্যা ৪৫০০ থেকে ৫৫০০-এর মধ্যে বেড়েছে, যা পূর্বের তুলনায় উল্লেখযোগ্য।