মিজোরামের ঐতিহাসিক কৃতিত্ব: ভারতের প্রথম পূর্ণ সাক্ষর রাজ্য ঘোষিত

মিজোরামের ঐতিহাসিক কৃতিত্ব: ভারতের প্রথম পূর্ণ সাক্ষর রাজ্য ঘোষিত

নয়াদিল্লি: ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জন করেছে মিজোরাম, যিনি দেশের প্রথম পূর্ণ সাক্ষর রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই ঘোষণা করেছে এবং মিজোরামকে এই কৃতিত্বের জন্য একটি প্রশংসাপত্র প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার, আইজলের মিজোরাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে একটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমার উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত চৌধুরী এই ঘোষণা করেন।
উল্লাস সাক্ষরতা মিশনের ভূমিকা: কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উল্লাস (আন্ডারস্ট্যান্ডিং লাইফলং লার্নিং ফর অল ইন সোসাইটি) উদ্যোগের অধীনে ৯৫% সাক্ষরতার হার অর্জন করলে একটি রাজ্যকে পূর্ণ সাক্ষর ঘোষণা করা হয়। ২০২৩-২৪ সালের পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে (পিএলএফএস) অনুযায়ী, মিজোরামের সাক্ষরতার হার ৯৮.২%। এই অর্জন সমাগ্র শিক্ষা এবং নব ভারত সাক্ষরতা কর্মসূচির (নিউ ইন্ডিয়া লিটারেসি প্রোগ্রাম) মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া উল্লাস মিশন নতুন সাক্ষরতার মান নির্ধারণ করেছে এবং রাজ্যগুলোকে এই লক্ষ্যে দ্রুত এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছে।
মিজোরামের প্রচেষ্টা: ২০১১ সালের জনগণনায় মিজোরামের সাক্ষরতার হার ছিল ৯১.৩৩%, যা দেশে তৃতীয় স্থানে ছিল। এই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে, রাজ্য সরকার ২০২৩ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ক্লাস্টার রিসোর্স সেন্টার কোঅর্ডিনেটরদের (সিআরসিসি) মাধ্যমে একটি দ্বারে দ্বারে জরিপ চালায়, যাতে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ৩,০২৬ জন নিরক্ষর ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়। এদের মধ্যে ১,৬৯২ জন শিক্ষার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। ২৯২ জন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক, যাদের মধ্যে ছাত্র, শিক্ষক ও সম্পদ ব্যক্তিরা ছিলেন, স্কুল, কমিউনিটি হল, ওয়াইএমএ লাইব্রেরি এবং শিক্ষার্থীদের বাড়িতে ক্লাস পরিচালনা করেন। মিজো ভাষায় ‘ভার্তিয়ান’ নামে শিক্ষা সামগ্রী এবং লংতলাই জেলার জন্য ইংরেজি সংস্করণ তৈরি করা হয়।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা বলেন, “এটি কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, বরং আমাদের সম্মিলিত ইচ্ছা, শৃঙ্খলা ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।” তিনি ডিজিটাল সাক্ষরতা, আর্থিক সাক্ষরতা এবং উদ্যোক্তা দক্ষতার উপর জোর দিয়ে এই অর্জনকে একটি নতুন যুগের সূচনা হিসেবে বর্ণনা করেন। জয়ন্ত চৌধুরী মিজোরামের জনগণ ও সরকারের প্রতিশ্রুতিকে প্রশংসা করে বলেন, “এটি কেবল মিজোরামের জন্য নয়, সমগ্র দেশের জন্য গর্বের মুহূর্ত।” ২০১১ সালে জাতীয় সাক্ষরতার হার ছিল ৭৪.০৪%, যা বর্তমানে ৮৫% এ পৌঁছেছে। মিজোরামের এই সাফল্য অন্যান্য রাজ্যের জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *