পারমাণবিক ভারতের স্থপতি ড. শ্রীনিবাসনের অবদান অমর

পারমাণবিক ভারতের স্থপতি ড. শ্রীনিবাসনের অবদান অমর

ভারতের পারমাণবিক শক্তি ক্ষেত্রের কিংবদন্তি বিজ্ঞানী ও পারমাণবিক শক্তি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. এমআর শ্রীনিবাসন মঙ্গলবার (২০ মে ২০২৫) তামিলনাড়ুর উধগমণ্ডলমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ৯৫ বছর বয়সে তাঁর প্রয়াণে ভারত এমন একজন বিজ্ঞানীকে হারাল, যিনি পারমাণবিক শক্তিতে দেশকে স্বনির্ভর করার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেছিলেন। ১৯৩০ সালে বেঙ্গালুরুতে জন্মগ্রহণকারী শ্রীনিবাসন মৈসুরের ইন্টারমিডিয়েট কলেজে বিজ্ঞান এবং সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৫০ সালে তিনি এম ভিশ্বেশ্বরাইয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক এবং ১৯৫২ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্যাস টারবাইন প্রযুক্তিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
১৯৫৫ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে তিনি পারমাণবিক শক্তি বিভাগে (ডিএই) যোগ দেন এবং পাঁচ দশক ধরে দেশের জন্য কাজ করেন। ড. হোমি জাহাঙ্গির ভাবার নেতৃত্বে ১৯৫৬ সালে ভারতের প্রথম পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর ‘অপ্সরা’ চালু হয়, যেখানে শ্রীনিবাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬০-এর দশকে তিনি তাড়াপুরে ভারতের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং পরে কলপক্কমে বিস্তৃত পারমাণবিক কমপ্লেক্স স্থাপনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৭ সালে তিনি মাদ্রাস পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প প্রকৌশলী নিযুক্ত হন, যা ভারতকে পারমাণবিক শক্তিতে স্বনির্ভরতার পথ দেখায়।
১৯৮৭ সালে শ্রীনিবাসন পারমাণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ডিএই-এর সচিব হন। তিনি নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (এনপিসিআইএল) প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর প্রথম চেয়ারম্যান হন। তাঁর তত্ত্বাবধানে ভারত ১৮টি পারমাণবিক ইউনিট তৈরি করে, যার মধ্যে সাতটি চালু হয়। তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান ছিল প্রেসারাইজড হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টরের উন্নয়ন, যা ভারতের পারমাণবিক কর্মসূচির মেরুদণ্ড হয়ে ওঠে। ১৯৭৪ সালে কানাডার সহযোগিতা প্রত্যাহারের পরও তিনি ভারতকে এই ক্ষেত্রে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যান।
তাঁর অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে পদ্মশ্রী, ১৯৯০ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০১৫ সালে পদ্মবিভূষণে সম্মানিত হন। ড. শ্রীনিবাসন, যিনি ‘ভারতের পারমাণবিক শিল্পী’ নামে পরিচিত, ক্যান্সার চিকিৎসা ও কৃষিতে পারমাণবিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেন। তিনি বলতেন, “বিজ্ঞান ও পরিশ্রমে কোনও লক্ষ্য আসাম্ভব নয়।” তাঁর প্রেরণা ভারতের তরুণ বিজ্ঞানীদের পথ দেখাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *