ভারতের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল জাপান ও ইউএই-তে, পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী মুখোশ উন্মোচনের লক্ষ্য

ভারতের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল জাপান ও ইউএই-তে, পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী মুখোশ উন্মোচনের লক্ষ্য

নয়াদিল্লি: পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বৈশ্বিক মঞ্চে উন্মোচনের লক্ষ্যে ভারতের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল জাপান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) পৌঁছেছে। জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) সাংসদ সঞ্জয় কুমার ঝা-র নেতৃত্বে একটি দল জাপানে এবং শিবসেনা সাংসদ শ্রীকান্ত একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বে আরেকটি দল ইউএই-এর আবুধাবিতে পৌঁছেছে। এই প্রতিনিধি দলগুলি ৩২টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দফতরে ভারতের অবস্থান তুলে ধরবে।

প্রতিনিধি দলের ডোজিয়ার ও উদ্দেশ্য
প্রতিনিধি দলগুলিকে তিনটি সেট নথি দেওয়া হয়েছে:
যাত্রা কর্মসূচি: কবে, কোথায় যেতে হবে, কার সঙ্গে দেখা করতে হবে এবং কোন গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

আলোচনার বিষয়: পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদ, ২২ এপ্রিল পাহলগাম হামলা এবং অপারেশন সিন্দুর সম্পর্কে কী বলতে হবে।

ডোজিয়ার: ১৫০ পৃষ্ঠার এই নথিতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে) সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ শিবিরের বিস্তারিত তথ্য, জম্মু ও কাশ্মীরসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসী হামলার প্রমাণ এবং ২০০৮ মুম্বাই হামলা, ২০০৫ লন্ডন বোমা হামলা এবং ৯/১১-এর মতো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ঘটনায় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার তথ্য রয়েছে।

অপারেশন সিন্দুর ও পাহলগাম হামলা
২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ৭ মে অপারেশন সিন্দুর শুরু করে। এই অভিযানে পাকিস্তান ও পিওকে-তে লস্কর-ই-তৈয়বা, জৈশ-ই-মোহাম্মদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের নয়টি সন্ত্রাসী শিবির ধ্বংস করা হয় এবং ১০০-এর বেশি সন্ত্রাসী নিহত হয়। পাকিস্তান ৮-১০ মে ভারতীয় সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন ও মিসাইল হামলার চেষ্টা করে, যার জবাব ভারত কঠোরভাবে দেয়। ১০ মে উভয় দেশের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও) সিজফায়ারে সম্মত হয়।

প্রতিনিধি দলের গঠন
সঞ্জয় ঝা-র দল (জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর): এতে বিজেপি সাংসদ অপরাজিতা সারঙ্গী, বৃজলাল, প্রদান বরুয়া, হেমাঙ্গ জোশী, তৃণমূল কংগ্রেসের অভিষেক ব্যানার্জি, সিপিএম-এর জন ব্রিটাস, কংগ্রেসের সলমান খুরশীদ এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মোহন কুমার রয়েছেন। সঞ্জয় ঝা এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী নীতি এবং অপারেশন সিন্দুরের সত্যতা বিশ্বের সামনে তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য।”
শ্রীকান্ত শিন্ডের দল (ইউএই, লাইবেরিয়া, কঙ্গো, সিয়েরা লিওন): এতে বিজেপি নেতা বাঁসুরি স্বরাজ, আতুল গর্গ, মানন কুমার মিশ্র, বিজেডি-র শশ্মিত পাত্র, আইইউএমএল-এর ই টি মোহাম্মদ বশির, প্রাক্তন মন্ত্রী এস এস আহলুওয়ালিয়া এবং প্রাক্তন কূটনীতিক সুজন চিনয় রয়েছেন। শিন্ডে বলেন, “ভারত শান্তিকামী দেশ, কিন্তু আক্রান্ত হলে জবাব দেবে। পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে মগ্ন, আর ভারত অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোনিবেশ করছে।”

ভারতের কূটনৈতিক উদ্যোগ
ভারত মোট সাতটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল ৩২টি দেশ ও ইইউ সদর দফতরে পাঠাচ্ছে। অন্যান্য দলের নেতৃত্বে রয়েছেন শশি থরুর (যুক্তরাষ্ট্র, পানামা, গায়ানা, কলম্বিয়া, ব্রাজিল), রবিশঙ্কর প্রসাদ (ইউকে, ফ্রান্স, জার্মানি, ইইউ, ইতালি, ডেনমার্ক), বৈজয়ন্ত পান্ডা (সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, আলজেরিয়া), কানিমোঝি করুণানিধি (স্পেন, গ্রিস, স্লোভেনিয়া, লাটভিয়া, রাশিয়া) এবং সুপ্রিয়া সুলে (মিশর, কাতার, ইথিওপিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা)।

২০ মে বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি প্রতিনিধি দলগুলিকে ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রস্থল। ওসামা বিন লাদেনের আশ্রয়দাতা এবং সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতার প্রমাণ বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হবে।” এই উদ্যোগে ভারতের ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি এবং পাকিস্তানের ৪০ বছরের সন্ত্রাসবাদী ইতিহাস তুলে ধরা হবে।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তান ভারতের এই কূটনৈতিক পদক্ষেপের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নির্দেশে পিপলস পার্টি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে। এই দল ‘শান্তির বার্তা’ নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের অবস্থান তুলে ধরবে। তবে, পাকিস্তানের বিশ্বাসযোগ্যতা সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার কারণে ইতিমধ্যেই প্রশ্নের মুখে।

ভারতের এই কূটনৈতিক অভিযান জাতীয় ঐক্যের প্রতিফলন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের প্রমাণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *