বিশ্ব অর্থনীতির দৌড়ে ভারত-চীন শীর্ষে, ট্রাম্পের ট্যারিফ সত্ত্বেও আমেরিকা পিছনে

বিশ্ব অর্থনীতির দৌড়ে ভারত-চীন শীর্ষে, ট্রাম্পের ট্যারিফ সত্ত্বেও আমেরিকা পিছনে

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বিশ্ব বাণিজ্যে আরোপিত উচ্চ ট্যারিফ সত্ত্বেও ভারত ও চীন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে। গোল্ডম্যান শ্যাক্সের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০৭৫ সালের মধ্যে ভারত ও চীন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যাবে। ট্রাম্পের ট্যারিফ নীতি আমেরিকার অর্থনৈতিক আধিপত্য ধরে রাখার প্রয়াস হলেও, দীর্ঘমেয়াদে ভারত ও চীনের উত্থান এই লক্ষ্যকে চ্যালেঞ্জ করছে।

২০০৩-২০২৩: অর্থনীতির চিত্র
২০০৩ সালে আমেরিকার জিডিপি ছিল ১১.৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে এর অবস্থান নিশ্চিত করেছিল। তখন চীনের জিডিপি ছিল মাত্র ১.৬৬ ট্রিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ আমেরিকার তুলনায় প্রায় ১০ গুণ কম। ভারতের জিডিপি ছিল আরও পিছিয়ে, মাত্র ৬০৭.৭০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু গত ২০-২২ বছরে চীন ও ভারত অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৩ সালে চীনের জিডিপি ১৭.৮০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, যা ১০০০% প্রবৃদ্ধির সাক্ষ্য দেয়। ভারতের জিডিপি ২০২৩ সালে ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ২০২৫ সালে ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়, যা ৫০০% এর বেশি প্রবৃদ্ধি। এই সময়ে আমেরিকার জিডিপি ২৫.৪৬ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছালেও প্রবৃদ্ধির হারে এটি চীন ও ভারতের তুলনায় পিছিয়ে পড়ে।

ট্রাম্পের ট্যারিফ নীতি ও প্রভাব
ট্রাম্প প্রশাসন ২০২৫ সালে চীনের পণ্যের উপর ১২৫% এবং ভারতের উপর ২৬% ট্যারিফ আরোপ করেছে। গোল্ডম্যান শ্যাক্সের মতে, এই ট্যারিফ ২০২৫ সালে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ০.৭ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে ৪% এ নামিয়ে আনবে। ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ০.১ থেকে ০.৬ শতাংশ পয়েন্ট কমতে পারে, তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা দাবি করেছেন যে তেলের দাম ৭০ ডলার/ব্যারেলের নিচে থাকলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৬.৩-৬.৮% প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। চীন ট্যারিফের প্রভাব মোকাবেলায় বড় আকারের উদ্দীপনা প্যাকেজ ও নীতি শিথিলকরণের পরিকল্পনা করছে, যা তার অর্থনীতিকে সমর্থন করবে।

২০৭৫ সালের ভবিষ্যদ্বাণী
গোল্ডম্যান শ্যাক্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৭৫ সালে চীনের জিডিপি ৫৭ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে, যা ১৯৬% প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে। ভারতের জিডিপি ৫২.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে, যা ১২০০% এর বেশি প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। আমেরিকার জিডিপি ৫১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে, যা ৬৮% প্রবৃদ্ধি। এই ভবিষ্যদ্বাণীতে ভারত ও চীন আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যাবে, যেখানে ভারতের তরুণ জনসংখ্যা, ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন এবং ডিজিটাল অর্থনীতি মূল ভূমিকা পালন করবে।

বিশ্লেষণ ও প্রেক্ষাপট
২০০৩ সালে আমেরিকার অর্থনৈতিক আধিপত্য অটুট ছিল, কিন্তু চীনের দ্রুত শিল্পায়ন ও ভারতের সংস্কারমুখী নীতি তাদের অর্থনীতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছে। ট্রাম্পের ট্যারিফ নীতি আমেরিকার অর্থনীতিকে স্বল্পমেয়াদে সমর্থন করলেও, গোল্ডম্যান শ্যাক্সের মতে, এটি ২০২৫ সালে আমেরিকার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ০.২ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে ১.৬% এ নামিয়ে আনতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে, জনসংখ্যার বৃদ্ধির হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের খরচ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। তবে ভারতের তরুণ কর্মশক্তি ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এটিকে বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষে নিয়ে যাবে।

এক্স-এর পোস্টে প্রতিক্রিয়া
এক্স-এর পোস্টগুলোতে ট্রাম্পের ট্যারিফ নীতির সমালোচনা ও সমর্থন উভয়ই দেখা যায়। কেউ কেউ মনে করেন, চীনের উপর ১৪৫% ট্যারিফ (পরে ৩০% এ নামানো) আমেরিকার অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করলেও ভারতের ‘বিশ্বের কারখানা’ হওয়ার স্বপ্নে ধাক্কা দিয়েছে। অন্যরা ট্রাম্পের নীতিকে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে সমালোচনা করেছেন, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি ও পাকিস্তানের জন্য সহায়তার ঘোষণার পর।
উপসংহার
ট্রাম্পের ট্যারিফ নীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে স্বল্পমেয়াদি অস্থিরতা সৃষ্টি করলেও, দীর্ঘমেয়াদে ভারত ও চীনের অর্থনৈতিক উত্থান অপ্রতিরোধ্য। ২০৭৫ সালের মধ্যে ভারতের জিডিপি আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যাবে, এবং চীন শীর্ষে থাকবে। ভারতের ডিজিটাল অর্থনীতি, তরুণ জনশক্তি এবং কৌশলগত সংস্কার এই দৌড়ে এটিকে এগিয়ে রাখবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *